ব্যক্তিগত সুপারহিরো

-জুবাইদা ফারজানা
ফেসবুকে কিছুদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম, খুব সংক্ষেপে গল্পটা এরকম —
একটা অডিটোরিয়ামে জন পঞ্চাশেক লোক জমা হয়েছিল কোন একজনের মটিভেশনাল স্পিচ শুনতে। বক্তা এসে প্রথমেই পঞ্চাশটি ফুলানো বেলুন রুমের মধ্যে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, “আপনাদের সবার নাম এই বেলুনগুলোতে লেখা আছে। সবাই প্লিজ নিজের নামের বেলুনটি খুঁজে নিন।”হুলস্থুল লেগে গেল পুরো ঘরটিতে, দশ মিনিট পরেও কেউ নিজের বেলুন খুঁজে পেল না, বরং বিশাল ঝগড়াঝাঁটি বেধে গেল সবার মধ্যে। বক্তা এবার সবাইকে থামিয়ে বললেন, “সবাই যে কোন একটা বেলুন তুলে নিন, এবার যার নাম লেখা আছে তাকে বেলুনটি দিয়ে দিন।” দুই মিনিটের মধ্যে সবার নাম লেখা বেলুন তাদের হাতে পৌঁছে গেল। বক্তা তখন বললেন, “এভাবেই যদি আমরা নিজের অধিকার খুঁজে খুঁজে হুলস্থুল না বাধিয়ে অন্যের অধিকার যা আমার দায়িত্বে আছে তা পালন করতাম, আমাদের জীবন কতইনা সুন্দর হতো!ঠিক এই বক্তব্য আমারও। আমি জানি পুরুষদের হাজারো ভুল আছে, দোষ আছে; কিন্তু সেগুলোর পরিবর্তন করা আমাদের সাধ্যে নেই। তবে আমরা অবশ্যই নিজেদেরকে পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারি৷ এই লেখায় তাই সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্যময় সাংসারিক জীবনের জন্য শুধুমাত্র বোনদের প্রতি কিছু কার্যকরী টিপস দেয়া হলো।

১.
আমরা মেয়েরা বিয়ের আগে সংসার নিয়ে যতটা সুখ-স্বপ্ন দেখি, ছেলেরা দেখে তার বহুগুন বেশী। তবে তারা সংসার নিয়ে যতটা দেখে তার চেয়ে বেশী দেখে বউ নিয়ে। হ্যা বউ। প্রতিটা ছেলের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত, পরম আরাধ্য বস্তু। এই বউ নিয়ে স্বপ্ন দেখার সময় কি তারা ঝগড়া করার স্বপ্ন দেখে? বউকে সারাদিন বকা দেয়া আর ভুল ধরার স্বপ্ন দেখে? অবশ্যই না। তবে কেন তারা এই আচরণগুলো করে?

পুরুষ মানুষ বাইরে যতটা শক্ত, ভেতরে ততটাই নরম। সেই নরম জায়গাটা কোন মেয়ের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়া তারা নিরাপদ মনে করে না, কঠিন আচরণের আবরনে ঢেকে রাখে। অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু সেটাই করা উচিত। এমনিতেই তারা তাদের প্রাপ্য সম্মান, আনুগত্য পায়না; যদি নরম হতো তাহলে কী ঘটত আল্লাহ জানেন। তাদের মনের নরম জায়গাটা ছুঁতে হলে সবার আগে তাদের এই আস্থাটা অর্জন করতে হবে যে “আমার দ্বারা তোমার আত্মসম্মান কখনই আঘাত প্রাপ্ত হবে না”।

তারা চায় বউ তার সম্মান করুক, আনুগত্য করুক। স্ত্রীর কাছে ছোট হওয়াকে মারাত্বক ভয় পায় তারা। অন্তত বাইরের লোকের সামনে তারা স্ত্রীর কাছ থেকে পরিপূর্ণ আনুগত্য আশা করে। আমরা যদি এই আনুগত্য তাদের দিয়ে দিই, তখন দেখা যাবে আমাদের ভিন্নমত থাকা স্বত্বেও তার মতামত আপনি যে খুশি মনে মেনে নিচ্ছেন, এতে যে কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে আপনার দিকটা আরেকবার ভাববে। লোকে দেখবে আপনি তার সব কথা মেনে নিচ্ছেন, অথচ আসলে দেখা যাবে তিনি তাই বলছেন যা আপনি চাচ্ছেন তিনি বলুক।

প্রত্যেক পুরুষ তার সংগিনীর চোখে হিরো হতে চায়। আমরা যেমন চাই আমাদের সৌন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ হোক; তারা চায় তাদের সাহসিকতা, দায়ীত্বশীলতা, পুরুষত্ব আমাদেরকে মুগ্ধ করুক। অথচ আমরা এমন নাদান – মুগ্ধ হবার বদলে সুক্ষ্ণ খোঁচা দিয়ে তাদের পুরুষত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বেশী পছন্দ করি। হিরোর বদলে বানিয়ে দেই হিরো আলম। ফলাফল — খোঁচার বদলে খোঁচা, তারপর আবার খোঁচা। এভাবে তীর ছোড়াছুড়ি চলতেই থাকে।

অনেক সময় এমন হতে পারে যে আপনি যখন একটা বাকা কথা বলেন, প্রথমে সে নির্লিপ্ত থাকে। আপনি হয়তো ভাবছেন তার গায়ে লাগে, আসলে ঠিকই লাগে। পরবর্তীতে আপনার কোন কাজের ভুল ধরার মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটে। এটা কিন্তু কেউ ইচ্ছা করে করেনা।

কেউ বারবার আপনার ভুল ধরছে, সেটা যত যৌক্তিক হোক, আপনি হয়ত চুপ করে থাকলেন, কিন্তু আপনার সামনে যখনই তার কোন ভুল আসবে আপনি সাথে রিএক্ট করে ফেলবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই। তাই আসুন খোঁচাখুঁচি বাদ দেই। প্রশংসার তেলে চুবিয়ে চুবিয়ে তাদেরকে চকচকে সুপারহিরো বানিয়ে রাখি। তখন বিপদে আপনার পাশে না থেকে নিজের “হিরো ইমেজ” ক্ষুন্ন করার মত বোকামি তারা করবে না। প্রত্যেক বিবাহিত নারীর একজন ব্যক্তিগত সুপারহিরো আছে, কী অদ্ভুত দারুণ তাই না!

২.
মানুষ তখনই অন্যকে ছোট করে কথা বলে যখন সে নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে। হীনম্মন্যতা এবং অহংকার দুটো বিপরীতমুখী শব্দ মনে হলেও আসলে তাদের অবস্থান কাছাকাছি। প্রথমটা থেকে যখন ডিপ্রেশন এসে যায় তখন ডিপ্রেশন থেকে বাঁচাতে আমাদের মস্তিষ্ক দ্বিতীয়টার জন্ম দেয়। মন তখন বলে কে বলেছে তোমার মধ্যে কিছু নেই, তোমার এই আছে সেই আছে, এগুলো কি তার মধ্যে আছে নাকি হ্যা? তাই যখন আপনার পার্টনার আপনাকে ছোট করছে, তখন যদি আপনিও তাই করেন তাহলে আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। তার হীনম্মন্যতা এবং অহংকার পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকবে। (also Inferiority complex can lead to sexual disability) সমাধান? এক নং পয়েন্টের উপদেশগুলো যত্নের সাথে এপ্লাই করুন।

যদি বলা হয়, “তোমার ফ্যামিলির লোকজন তো এমন…..”। উত্তরে ক্ষেপে না গিয়ে বলবেন, “তুমি যা বলছ পুরোপুরি ঠিক না। আসলে ব্যাপারটা এমন। তবে তোমার ফ্যামিলির মধ্যে এটা নেই এই ব্যাপারটায় আমি ইম্প্রেসড।”

আপনি তার সাথে কী আচরন করছেন আর সে আপনার সাথে কী করছে এভাবে তুলনা করতে যাবেন না। সে আপনার উপর দায়ীত্বশীল, আপনি না। আপনার ভালো মন্দের দায় তার উপর, যেমন আপনার উপর আপনার সন্তানের ভালো মন্দের দায়। তাই মাপতে হলে সন্তানের সাথে আপনার আচরণ দিয়ে মাপুন। বাচ্চারা যেমন আপনার সব সিদ্ধান্ত আর সব নিষেধাজ্ঞার কারন বোঝে না, আপনিও তেমন বুঝেন না এটা মেনে নিন। পুরুষ মানুষের দূরদর্শিতা এবং চিন্তার গভীরতা একটু বেশীই থাকে সাধারনত৷ সে যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তাকে তার ভুল থেকে শিখতে দিন। বলে বলে শেখানোর দরকার নাই, সম্ভবও না।

৩.
আমরা মেয়েরা নিজেদেরকে যতটা দুর্বল আর অসহায় মনে করি, আদতে আমরা তা না। আল্লাহপাক ছেলেদেরকে শারিরীক শক্তি দিয়ে তাদের মনের চাবি মেয়েদের হাতে দিয়ে দিয়েছে। আমরা সে চাবিটা ঠিকমত চালাতে জানি না। উলটো খারাপ ব্যবহার, অবাধ্যতা, উদাসীনতার মাধ্যমে চাবিটাই হাতছাড়া করে ফেলি। আমাদের কোমলতা আমাদের শক্তি। পুরুষরা নারীর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। তাদেরকে মিষ্টি কথায় ভোলানো এমন কোন কঠিন কাজ না। হ্যা যদি আপনি মনে করেন “আমিই কেন শুধু মিষ্টি কথা বলব”, অথবা “আমি ভাই সোজা সাপটা কথা বলি, স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড, অত ভনিতা জানি না” তাহলে আপনাকে আমার কিছু বলার নেই। কোন কথাটা কোথায় কখন কিভাবে বললে সর্বোত্তম ফলাফল আসবে এই জ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি। তবে অনেকে সমাধান চায় না, শুধুই তর্কে জিততে চায়।

৪.
সে কেন আমাকে বোঝে না। নাহ, বোঝেনা সে বোঝেনা, জাতীয় সমস্যা। একসময় আমার দাম্পত্য জীবনে মূল সমস্যা ছিল এটা৷ “সময়” আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমি তাকে বুঝি এরচেয়েও কম। একটা দুই বাচ্চার মা সারাদিন ঘরে বসে কী করে এটা বোঝা একটা পুরুষের পক্ষে আদৌ সম্ভব না, দরকারই বা কি বোঝানোর? যদি বলতে আসে সারাদিন ঘরে বসে করো কি? মুচকি হেসে বলে দেন “ও তুমি বুঝবে না”। ভুল ধরছে? ভালো তো, সারাক্ষণ ভুল ধরিয়ে দেয়ার মানুষ থাকা খারাপ কিছু না। নিজেকে শোধরানোর কী সুন্দর সুযোগ!

৫.
আমরা সবাই কমবেশী অলসতা নামক মহামারীতে আক্রান্ত। নিজেদের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন, আর ধুমিয়ে কাজ করুন। কাজ শেষে ভাববেন না এত কাজ করলাম কেউ তো কৃতজ্ঞ হয় না; বরং নিজে কৃতজ্ঞ হোন, আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার কাজগুলো করতে পেরেছি, আমার ওপর আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্বগুলো পালন করতে পেরেছি। একটা জায়গা তো আছেই যেখানে সব প্রতিদান জমা থাকে। যেখানে অবিচার হবে না কারো সাথেই।

৬.
হাজবেন্ডের সামনে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। তার সাথে “টিপিক্যাল ওয়াইফ” না হয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে “ভালোবাসার সাথি” হয়ে যান। তার চাহিদাগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন, ছোটখাটো চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তার মন জয় করে রাখুন। দেখবেন দু’জনের মাঝে ভালোবাসা উপচে পড়বে। তিনিও আপনার চাহিদা পূরণে মনোযোগী হবেন।

ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই৷ একজন ভদ্রলোক প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে এক গ্লাস পানি খান। স্ত্রী এটা লক্ষ্য করলেন এবং একদিন হাসবেন্ড ফেরার পর হাসিমুখে দরজা খুলে ঠান্ডা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। এতে স্ত্রীর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা নিজের অজান্তেই বেড়ে গেল৷ এরকম ছোট ছোট ভালোবাসাপূর্ণ কাজ সম্পর্ককে আরো মজবুত করে তোলে।

৭.
মানুষের খারাপ আচরন উপেক্ষা করবেন কিভাবে? শশুরবাড়িতে কেউ একটা বাজে কথা বলল? প্রথমেই উপেক্ষা করার দরকার নেই। ভেবে দেখেন আপনি সত্যিই এই ভুলটা করেন কিনা। যদি করেন সাথে সাথে স্বীকার করে নেন। হ্যা এরকম তো হওয়া উচিত না, আমিও ভেবেছি, এই এই কারনে পারছি না। চেষ্টা করবো। কিছু না বলে চুপচাপ থেকে ভেতরে ভেতরে গজগজ করবেন না। উলটা যে বলেছে তার ভুল ধরতে যাবেন না। আর যদি ভুলটা আপনার মধ্যে না থাকে? তাহলে তো কোন কথাই নেই৷ যে খারাপ আচরন করছে এটা তার সমস্যা। এই জিনিসটা মাথায় গেঁথে নিন, কেউ অহেতুক খারাপ আচরন করছে এটা তার সমস্যা, আপনার না। হয় সে অসুস্থ, নয়তো অবুঝ, অথবা স্ট্রেসড। নিজের ভুল বুঝতে পারছে না। তার জন্য দোয়া করে দেন। আল্লাহ আপনি তার সমস্যার সমাধান করে দিন।

হাজবেন্ড ঘরে ঢুকেই ঝাড়ি দিলো, that means he is in trouble. সাইলেন্ট হয়ে গাল ফুলিয়ে দূরে সরে থাকার কিছু নেই। পাশে বসে জিজ্ঞেস করুন শরীর খারাপ লাগছে? তারপর দেখুন ম্যাজিক।

৮.
এবার শাশুড়িকে বশ করার মন্ত্র বলে দেই শুনুন। অল্প বয়সী শাশুড়িকে বশ করবেন প্রশংসা দিয়ে। তার কর্মদক্ষতা, রান্না, ম্যানেজমেন্টের প্রশংসা করুন৷ শিখতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করুন। সংসারের বিভিন্ন বিষয়ে তার পরামর্শ নিন। মাঝে মাঝে তার ছেলের নামে বিচার দেন। সিরিয়াস বিচার না কিন্তু আবার, “মা আপনার ছেলে আমি বললে শোনে না, আপনি একটু বলে দেন” এই টাইপের বিচার। সিরিয়াস সমস্যাগুলো নিজেরা সমাধান করবেন। যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন দু’জনের বাইরে যেন না যায়।

হাজবেন্ডের কাছে শাশুড়ির বদনাম করার চাইতে শাশুড়ির কাছে হাজবেন্ডের নামে অভিযোগ করা অধিক ফলপ্রসূ৷ শাশুড়ি স্বস্তি পাবেন “যাক, ছেলে তাহলে পুরোপুরি বউয়ের হয়ে যায়নি, বউয়ের সাথেও উল্টাপাল্টা করে৷ কথা শোনে না।”

আর বয়স্ক শাশুড়ি হলে শুধু গল্প করেন তার সাথে। সময় দেন তাকে। বৃদ্ধ বয়সে সবাই খুব একা হয়ে যায়। নিজের ছেলেমেয়েদেরকেও আগের মতো কাছে পান না। তাকে শুধু বলবেন গল্প বলতে — অতীতের সুখ-দুঃখের কাহিনী, বিয়ের সময়ের গল্প বলতে। একবার উস্কে দিয়ে এরপর শুধু চুপচাপ বসে থাকবেন, দেখবেন কিভাবে বলে যাবেন। শুনতে শুনতে একসময় দেখবেন আপনি আপনার খারুস শাশুড়ির প্রেমে পড়ে গেছেন।

৯.
হাজবেন্ড, শাশুড়ি অথবা শ্বশুরালয়ের যে কারো সাথে কমিউনিকেশন গ্যাপ যেন না সৃষ্টি হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। সংসারের অধিকাংশ সমস্যার পেছনে থাকে সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা না বলা। অভিযোগ করার আগে ভেবে নিবেন দোষ আসলে কার ছিল। অথবা যাকে দোষারোপ করছেন তার অবস্থানে নিজেকে একবার দাড় করিয়ে নেবেন। দুনিয়াতে আমরা কেউই পার্ফেক্ট নই। কমবেশি দোষত্রুটি সবারই থাকে৷ সংসারের কিছু কিছু ব্যাপার পরিস্থিতি আর অবস্থা বুঝে প্রজ্ঞার সাথে হ্যান্ডেল করতে হয়৷

১০.
সবচেয়ে শেষ এবং সবচেয়ে জরুরি টিপস — আমল জোরদার করুন। রবের সাথে সম্পর্ক মজবুত করুন। সকাল সন্ধ্যার আমল মিস দিবেন না। দৈনিক তিলাওয়াত মিস দিবেন না। ইনশাআল্লাহ কোন বদনজর, কোন ব্ল্যাক ম্যাজিক সংসারে অশান্তি আনতে পারবে না। বাচ্চাদেরকে এবং স্বামীকেও নজরের দোয়া পড়ে পড়ে ফু দিয়ে রাখবেন৷ নিজের এবং সন্তানদের মধ্যে আমলের অভ্যাস গড়ে তুলবেন। স্বামী যদি দ্বীনদার না হন অথবা আমল কম করেন, তার সাথে আমল নিয়ে ঘ্যান ঘ্যানানো যাবে না। তিনি আপনার অধীনস্ত নন। তার জন্য আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন না। তার জন্য শুধু দুয়া করবেন, সম্ভব হলে প্রজ্ঞার সাথে দাওয়াত দিবেন। সে হয় আপনাকে দেখে বদলাবে, আর না হয় আপনার দুয়ায় নিজে নিজে বদলাবে। আপনার কথায় কখনোই বদলাবে না, বরং কথার দ্বারা হিতে বিপরীত হওয়ার রেকর্ড বেশী।

সবার জন্য অনেক অনেক দুয়া আর ভালোবাসা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সংসারে বারাকাহ আর কল্যান দান করুন। আমীন।
………………

বি:দ্র:

স্বামী কেন পরিবারের আমীর বা কর্তা এবং স্ত্রীকে কেন তার আনুগত্য করতে হবে এ ব্যাপারে যাদের পরিষ্কার ধারনা নেই বা কোন প্রশ্ন বা সংশয় আছে তাদের জন্য মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম এর “স্বামী স্ত্রীর সুন্দর জীবন” বই থেকে আংশিক উল্লেখ করছি –

//হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী (রহ.) বলেন, (আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন) পুরুষদের তো “পুরুষ নারীর কর্তা” এ আয়াত মনে থাকে। তাই তারা বসে বসে মহিলাদের উপর হুকুম চালায় আর মনে করে যে, মহিলাদেরকে তো সর্বাবস্থাতেই অনুগত ও বাধ্যগত থাকা উচিত। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক মুনিব ও চাকরের মত। আল্লাহ হেফাযত করুন। কিন্তু কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা অন্য আরেকটি আয়াতও অবতীর্ণ করেছেন। এই আয়াত পুরুষদের মনে থাকে না। আয়াতটি হল –

“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীদেরকে যাতে তোমরা তাদের থেকে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা রুম:২১]

হযরত থানভী (রহ.) বলেন নিঃসন্দেহে স্বামী—স্ত্রীর অভিভাবক কিন্তু সাথে সাথে পরস্পর বন্ধুত্বের সম্পর্কও রয়েছে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি অভিভাবক, কিন্তু আচরণে পারস্পরিক বন্ধুর মতো। তাই দু’জনের সম্পর্ক এরূপ নয় যেরূপ মুনিব ও চাকরের সম্পর্ক। এর উদাহরণ হলো – দু’বন্ধু কোথাও সফরে যাচ্ছে, একজন অপরজনকে আমীর বানিয়ে নিল। স্বামী এই হিসাবে আমীর যে, জীবনের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সে দায়িত্বশীল। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, সে স্ত্রীর সাথে এমন ব্যবহার করবে যেমন ব্যবহার করা হয় গোলাম ও চাকরদের সাথে; বরং এ বন্ধুত্বের কিছু আদব ও আবেদন আছে। সে সকল আদব ও আবেদনের মাঝে কিছু সূক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর বিষয়ও আছে তবে তা স্বামীর অভিভাবক হওয়ার প্রতিবন্ধক নয়।//

………………………..

#রৌদ্রময়ী_প্রবন্ধ

fb.com/roudromoyee