অন্য ভুবন

কেন যেন ঘুমটা ঝটকা দিয়ে ভেঙে গেল। দরজা নক করছে কেউ। ধাম ধাম ধাম। বুয়া এসেছে হয়ত। চোখ খুলতে পারছেনা মিঠি। আইকা গাম দিয়ে চোখের দুই পাতা এটে দিয়েছে যেন কেউ।

রাত দেড়টা বাজে। এইসময় বুয়া আসার কথা না। কিন্তু কেন যেন অস্বাভাবিক লাগছেনা ব্যাপারটা তার কাছে।

কোনমতে উঠে হাতড়ে হাতড়ে হেটে যেয়ে দরজা খুললো। ময়নার মা আসছে। কিন্তু মুখটা কেন এত অন্য রকম লাগছে। অন্যদিন দরজা খুলে দিলেই ময়নার মা পান খাওয়া হলুদ দাঁত বের করে হেসে দেয়। আজ কেমন লাল চোখে ঘাড় বাঁকিয়ে অদ্ভুত ভাবে দেখছে। চোখের দিকে তাকাতেই বুকটা ধড়াস করে ওঠে মিঠির। হঠাৎ বুঝলো কি হয়েছে। বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটাচ্ছে কেউ।

এটা স্বপ্ন। কিন্তু বড় যন্ত্রণাদায়ক স্বপ্ন। বোবায় ধরেছে তাকে। ব্যাপারটা বোঝার পরেই পুরো শরীর যেন একদম অবশ হয়ে গেল তার। মুখ দিয়ে গো গো আওয়াজ বের করছে কোনমতে।

ময়নার মায়ের অবয়বটা বিছানাতেই মিঠির বুকের উপর উঠে বসলো।

এটা স্বপ্ন, এটা স্বপ্ন। এক্ষুনি ভেঙে যাবে। এক্ষুনি। মনে মনে নিজেকে বোঝাচ্ছে। মুখ দিয়ে গোঙানি ছাড়া কিছুই বের হচ্ছে না। লোমশ হাত দিয়ে মিঠির গলা চেপে ধরেছে ওটা। বুকের উপর থেকে সারা শরীরে শিরশিরে অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি ছড়িয়ে যাচ্ছে। কি কষ্ট কি কষ্ট।

এলোমেলো দুয়া মাথায় আসছে। কোনটা জানি পড়বে এখন? ইন্নালিল্লাহ আল্লাহু আকবার আল-হামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এলোমেলো ভাবে ঘুমের মধ্যেই যিকির করছে। মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছেনা। শুধু গো গো আওয়াজ। হঠাৎ আয়াতুল কুরসী পড়া শুরু করে। অর্ধেকটা পড়তে পড়তেই অবয়বটা বুকের উপর থেকে নেমে যায়।

ধড়মড় করে উঠে বসে খাটে। সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে গেছে। হাত পা কাঁপছে। বুকের ভিতর হৃদপিন্ডটা যেন ছিড়েই যাবে এবার।

“আউযুবিল্লাহ আউযুবিল্লাহ”। বলে তিন বার বাম দিকে থু দেয় সে। “আল্লাহ আশ্রয় দিন, আশ্রয় দিন”।

হাতড়ে হাতড়ে মোবাইলটা খুঁজে বের করে বিছানা থেকে। ১:৩৫ বাজে। টর্চ জ্বালায় মোবাইলে। আলোর দরকার ছিলনা একদমই। ঘরটার কোণা পর্যন্ত তার মুখস্থ। কিন্তু এই অসময়ে আলোটার খুব দরকার অনুভব করে সে।

খাট থেকে নামে সে। একটু একটু করে ধাতস্থ হচ্ছে সে।

ছেলেমানুষি হচ্ছে জেনেও মনে মনে বলে ওঠে, “খামাখা কষ্ট দিলি না? এইবার দেখ কি করি। ভাবসিলাম একবারে উঠে ফজর পড়বো, কিন্তু এখন তাহাজ্জুদ পড়ে তোর চোদ্দটা বাজাবো। এখন যা তোর ওস্তাদের কাছে যেয়ে ঠ্যাংগানি খা।”

গজ গজ করতে করতে বাথরুমের দিকে রওনা দেয় সে, ওযু করবে।

পরিশিষ্ট :

সৎ ও ভাল স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের তরফ হতে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ পছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখে তখন এমন লোকের কাছেই বলবে, যাকে সে পছন্দ করে।

আর, খারাপ বা অপছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখলে যা যা করা উচিৎঃ

১. তার বাম দিকে হাল্কা থুতু ফেলবে। (৩ বার)

২. শয়তান থেকে এবং যা দেখেছে তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে প্রার্থনা করবে। (৩ বার)

৩. কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলবে না।

৪. অতঃপর যে পার্শ্বে সে ঘুমিয়েছিল তা পরিবর্তন করবে।

৫. যদি ইচ্ছা করে তবে উঠে সালাত আদায় করবে। [১]

[১] মুসলিম, ৪/১৭৭২, ১৭৭৩, নং ২২৬১, ২২৬২।

অন্য ভুবন
নূরুন আলা নূর

এপ্রিল ২৯, ২০১৮ইং