প্রত্যাবর্তন

কলেজের প্রথম দিন। নতুন কলেজ , নতুন হোস্টেল! অন্যরকম উত্তেজনা। খুব সকালে উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে। কত টেনশন মাথায়! কত কেনা কাটাও করতে হবে। বাবার কাজ থাকায় ছোট চাচা এসেছে। সব চাচাই করে দিবে। তবুও টেনশন তো থাকেই।

নতুন মানুষের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এতক্ষণে রুমমেট কোনো কথাও বলেনি। কত্তো প্রশ্ন করে ফেলেছে সায়মা। কোনো উত্তর নেই। কোনো প্রশ্ন করলে রুমমেট এমনভাবে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মনে হয় যেন … সায়মা যে ভাষায় কথা বলছে, তা পৃথিবীতে এখনো আবিষ্কারই হয়নি। আশ্চর্য!!

তবুও খুব একটা মন খারাপ হচ্ছে না সায়মার। 
এখন থেকে সায়মা একা থাকবে। কত্তো বড় হয়ে গেছে ও। শহরে একা থাকবে তাও আবার হোস্টেলে। 

কত্তো গল্প শুনেছে ও হোস্টেল নিয়ে। হোস্টেলে নাকি ভূত থাকে। সব হোস্টেলেই নাকি কেউ না কেউ আত্মহত্যা করে। তার আত্মা নাকি সারা জীবন হোস্টেলে ঘুরে বেরায়। ভূত টুত মোটেও ভয় পায় না সায়মা। তবুও ভাবতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো কেমন যেন! আজ রাতেই যদি ওর ভূতের সাথে দেখা হয়ে যায়!!

ধ্যাত! এই সময় এসব কি ভাবছে ও। এখন থেকে সায়মা একা হোস্টেলে থাকবে। এটাই তো অনেক বড় কথা। আগে তো মা ব্রিজের পাড়ের দোকানেও একা যেতে দিত না। ইশ!! কি মজা !! 

ফজরের পর আর ঘুম আসে না সায়মার। বহুদিনের পুরনো অভ্যাস। কিন্তু রুমমেট গাছের গুড়ির মত ঘুমাচ্ছে। অনেকটা সময় বারান্দায় বসে কোরআন পড়ে নিলো সায়মা। এর মধ্যেই দেখলো রুমমেট উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। রুম গুছিয়ে, বেড গুছিয়ে, ব্যাগ গুছিয়ে এবার সায়মাও রেডি হওয়া শুরু করলো।

“এএএম্মা !!! তুই বুঝি বোরখা পড়ে কলেজে যাবি!” রুমমেটের মুখে প্রথম বুলি। তাও আলহামদুলিল্লাহ্‌ মেয়েটা কথা বলতে জানে!! সায়মা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। 

“আবার নেকাবও পড়বি !! ” বিরক্তির সীমা যেন পার হয়ে গেছে মেয়েটার। সায়মা আবারও শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

মেয়েটা বললো, “তুই কি পাগল! কলেজে কেউ এভাবে যায়!”

“আমি তো স্কুলেও এভাবেই গিয়েছি। কি হয়েছে তাতে!” সায়মা মোটামোটি অবাকই হলো।

“স্কুলে এভাবে গেছিস, তাই কলেজেও যেতে হবে? এখন তুই বড় হয়েছিস না? আর আগে তো তুই গ্রামে থাকতি! যেমন দেশ তেমন বেশ বলেও তো একটা কথা ! কলেজে উঠলে স্মার্ট হয়ে চলতে হয়…”

মেয়েটা হাজারটা জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে। কিভাবে কি করতে হবে। এটা… সেটা… কত্তোকি! আরে বাবা! এই মেয়ে এতো কথা বলতে পারে… !!

সায়মা এ কান দিয়ে শুনছে, অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে। চলুক যে যেভাবে খুশি, বলুক যার যা বলার। সায়মা কখনোই নেকাব ছাড়বে না।

হোস্টেল জীবনটা সত্যিই খুব মজার। মাত্র এ ক’দিনেই কত্তো বান্ধবী হয়ে গেছে সায়মার। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে সারা রাত আড্ডা চলে। অবশ্য, এ কারনে ফজরের নামাজটা পড়া হয় না, ক্লাসে ঘুম চলে আসে, স্যারদের কথা একদম বোঝা যায় না। 

বান্ধবীদের মধ্যে মালিহা নামের একজন আছে। খুব দুষ্টু। কি যে বিশ্রি বাজে কথা বলে ও, ছিহ্!!! এসব কথা সায়মা আগে কখনো শোনেওনি বলা তো দূরের কথা।

মালিহা প্রায়ই বলে, “আরে জীবনে কতো ক্লাস করবো কতো এক্সাম দিবো, কিন্তু এমন একটি রাত তো আর ফিরেবে না। মাত্র তো দু’টো বছর। তারপর কে কোথায় যাবে কেউ জানে না। তাই যতটুকু সম্ভব ঝোলা ভরে স্মৃতি নে”।

মালিহার এই কথাটা খুব ভালো লাগে সায়মার। সত্যিই তো, মাত্রই তো দু’টো বছর। আজ সন্ধ্যায় আড্ডার মধ্যে হঠাৎ মালিহার মাথায় “ফ্যাশন শো” এর আইডিয়া এলো।

মালিহা হোস্ট। দীপ্তি, কাকলি, ইবাদি, বুশরা, পিউ, তিশা, সায়মা, প্রিয়াংকা, আয়শা, রিয়া সবাই মডেল। হোস্টেলে আনা সবচে’ ভালো ড্রেসটা পরে সেজেগুজে ক্যাট ওয়াক করতে হবে।

সাদিয়া (সায়মার রুমমেট) – কে কিছুতেই রাজি করানো গেলো না। খাটের এক কোনায় ফোনটা নিয়ে পরে থাকে সারাক্ষণ মেয়েটা। তাই তাকে ফোনে গান প্লে করতে বলা হয়েছে। প্রমি, টুম্পা, দিলরুবা হচ্ছে বিচারক। কাকে কেমন সুন্দর লাগছে ওরা সেটা বলবে।

একজন একজন করে হেঁটে যাচ্ছে আর বিচারকগণ তাদের মন্তব্য করছেন। ছিহ্!! কি বাজে বাজে কথা!!! এসব শুনে সায়মার আর এসব করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

তবু মালিহার খুব জোরাজোরিতে সায়মাও র‍্যাম্প ওয়াক করলো। তবে, সায়মার বেলাই কেউই তেমন বিশ্রী কথা বললো না। সবাই খুব ভালো কথা বললো। সায়মাকে কত সুন্দর লাগছে, চুল বাঁধা কত সুন্দর হয়েছে… 

মাহিলা বলে উঠলো, “আমাদের হুজুরানী যে আসলে কত সুন্দর তা যদি প্রান্তিক জানতো… তাহলে… !!!”

সায়মার কেমন যেন শরীরটা বরফ হয়ে গেলো।
এখানে প্রান্তিকের কথা এলো কোথা থেকে! সায়মার যে প্রান্তিককে ভালো লাগে এটা কি মালিহা জানে!? নাহ্!! কিভাবে!? জানবে কি করে!? একথা কখনোই উচ্চারণও করেনি সায়মা। এমনকি রুমমেট সাদিয়াকেও বলেনি।

সত্যিই কি প্রান্তিক ওকে এভাবে দেখলে… 

প্রায় সপ্তাহ খানেক প্রচন্ড জ্বরে ভুগেছে সায়মা। হোস্টেলে আসার পর এই প্রথম মাকে এত্তো মনে পড়েছে ওর। জ্বর হলে মা কত্তো আদর করতো।
এ সময়ে সাদিয়া মেয়েটেকে খুব ভালো ভাবে চিনতে পেরেছে সায়মা। ওর মত এমন অসভ্য মেয়ে মনে হয় পৃথিবীতে আর নেই। 

জ্বরে গা পুড়ে যায় সায়মার শোয়া থেকে উঠতে পারে না, তাই তো সাদিয়াকে বলেছিলো একটু নীচ থেকে খাবারটা এনে দিতে। মেয়েটা মুখের উপর বলে দিলো, “পারবো না! নিজেরটা নিজে কর গিয়ে। না হলে তোর প্রানের বান্ধবী মালিহাকে বল। আর সেটাও না হলে প্রান্তিক কে কল দে”।

প্রান্তিক ওকে নোটের জন্য কল করে তাতে সাদিয়ার সমস্যা কোথায় কে জানে। সব ব্যাপারে ওকে টেনে একে খোঁটা দেয়া। 

আজ শরীরটা একটু ভালো আছে। ক্লাসে যাওয়া যাবে। তাই ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা সেড়ে রেডি হতে যাবে এমন সময় সায়মা দেখলো নেকাবটার ঠিক মাঝখানে গোল হয়ে ছেড়া। নাহ্! ছেড়া না, কাটা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ খুব সাবধানে কেঁচি দিয়ে নেকাবটা কেটে রেখেছে।

কাজটা কার তা বুঝতে আর বাকি রইলো না সায়মার। তবু কিছু বললো না ও।

সায়মারও ইদানীং নেকাব পড়তে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। নেকাব পড়ার কারনে কেউ ওর সাথে ভালোভাবে কথাও বলে না। প্রান্তিকও না। নোট নেয়ার সময় কেমন যেন নীচের দিকে তাকিয়ে নিয়ে চলে যায়। একবারও ওর চোখের দিকে তাকায়নি। অথচ, মালিহা সব সময় বলে সায়মার চোখ দু’টো নাকি খুব সুন্দর।

যাক তাও এতদিনে নেকাব না পড়ার একটা অজুহাত পাওয়া গেলো। তবু যাওয়ার সময় একবার কো-অরডিনেটর ম্যামকে নালিশ করে যেতে হবে। তা না হলে সবাই কি না কি ভাববে।

ঈদের ছুটি কাটিয়ে হোস্টেলে ফিরেছে সায়মা। এসেই দেখে সাদিয়া ওর জন্য খুব সুন্দর একটা জামা বানিয়ে এনেছে। দু’জনের একই রকম জামা। সায়মার খুব পছন্দ হয়েছে জামাটা।

সাদিয়া মেয়েটা একটা পাগল মনে হয়। কখন যে কি করে বসে। তবে মেয়েটার মনটা ভালোই। শুধু রাগ হলেই মুখে যা আসে তাই বলে দেয়। তাও মালিহার মতো বিশ্রী কথা বলে না।

মেয়েটা এসেই বায়না ধরেছে এবারের পিকনিকে দু’জনের একই রকম জামা পড়ে যেতে হবে। সায়মা হ্যাঁ না কিছুই বলেনি। আরো তো কিছুদিন বাকি আছে। দেখা যাক কি করা যায়। এখন থেকে প্রতিদিন একই ঘ্যান ঘ্যান শোনা লাগবে সায়মার। 

একই জামা পরে যেতেই হবে। জামার সাথে ম্যাচিং করে চুড়িও কিনে ফেলেছে সাদিয়া। এই মেয়েটার মাথায় একবার একটা ভূত চাপলে সে সেটাই করে ছাড়ে। প্রচণ্ড জেদি মেয়ে। ইশ্! এই জেদটা যদি ও পড়াশোনায় দেখাতো।

একজন মানুষ একটা কথা বারবার বললে সেটা না করে আর থাকা যায় না। তাছাড়া, সায়মারও পিকনিকে বোরখা পরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। সবাই কত্তো সেজেগুজে যাবে। ফুল হাতা জামার সাথে হিজাব পড়লেও তো পর্দা হবেই, তাই না! কি আর ঢাকা বাকি থাকে! মুখ!? মুখ ঢাকা তো আর ফরজ না। 

✤ 

কিছুদিন থেকে সায়মার সব বান্ধবীদের একটা নতুন অভ্যাস হয়েছে, সন্ধ্যার পর ফুচকা খেতে যাওয়া। কলেজের সামনের ফুচকার দোকানগুলো সন্ধ্যার পর আরো জমজমাট হয়ে ওঠে।

ইবাদি, মালিহা, পিউ, সাদিয়া, দিলরুবা আজ ওরা সবাই যাচ্ছে। গতকাল ফুচকার দোকানে কি যেন ঝগড়া, না কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। তাই আজ প্রিয়াংকা যাচ্ছে না।

মালিহা কেন যেন ইদানীং খুব ভাব নেয়। সায়মার সাথে কোনো কথাই বলে না। সায়মা নিজে থেকে অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলতে। কিন্তু মালিহা এড়িয়ে যায়।

কিন্তু সাদিয়া এখন আর সায়মাকে ছাড়া কোনো কিছুই একা করে না। তাই বরাবরের মত সাদিয়া অনেক ঘ্যান ঘ্যান করলো যেন সায়মা ফুচকা খেতে যায়। একদিন গেলেই তো বুঝবে কত্তো মজা। একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে।

কিন্তু সায়মা খুব কঠোরভাবে বলে দেয় ও যাবে না। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালের মাত্র কয়েক দিন বাকি। ফাইনালের আগে আর ক্লাস নেই। এ ক’দিনই তো সময়। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।

টিউটোরিয়ালে ফেইল করেছে, তাও মানা যায়। ফাইনালে ফেইল করলে খবর বাড়ি চলে যাবে। সারাজীবন স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিলো সায়মা। কলেজে রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে এটা কিছুতেই বাড়িতে জানতে দেয়া যাবে না।

সবাই বেরিয়ে যাবার পর রুম ঝাড়ু দিয়ে, গুছিয়ে পড়তে বসলো সায়মা। কোনো পড়া মাথায় ঢুকে না। সারারাত জেগে ঘুম থেকে উঠতেই ক্লাসে সময় পার হয়ে যায়। কত ক্লাস মিস হয়ে গেছে এভাবে। যে ক্লাসগুলো করেছে সেগুলোও মাথায় ঢুকেনি কিচ্ছু।

হঠাৎ ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো। প্রান্তিকের এস এম এস!

“সায়মা, তোমাকে ছাড়া ভালো লাগে না। তুমিও প্লিজ আসো। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।“

এখন প্রান্তিক ওকে ‘তুমি’ করে বলে। আগে ‘তুই’ বলতো। হঠাৎ কি কারনে সম্বোধন পরিবর্তন জানা নেই। অবশ্য ব্যাপারটা খুব একটা খারাপ লাগেনা সায়মার।

বই বন্ধ করে রেডি হতে যাবে এমন সময় আবার এস এম এস। প্রান্তিকেরই।

“প্রিয়াংকার বার্থডেতে যে লাল ড্রেসটা পড়েছিলে সেটা পরে আসো। আর চুল বাঁধবা না।“

সায়মা বাধ্য মেয়ের মত রেডি হতে শুরু করলো।
প্রান্তিক আগেও একবার এমন আবদার করেছিলো। তখন সায়মা শোনেনি। শাস্তি সরূপ প্রায় এক মাস ও সায়মার সাথে কথা বলেনি।

ক্যান্টিনে কাকলির সাথে বসে আইসক্রিম খেতো। এসব দেখতে মোটেও ভালো লাগতো না সায়মার।
তাই আর দ্বিতীয়বার প্রান্তিককে রাগিয়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই ওর।

আর কি এমন হবে একদিন হিজাব না পরলে! তাও এখন তো সন্ধ্যা। কে এমন চেয়ে আছে সায়মার রূম দেখতে!!

সায়মাকে দেখে কেমন যেন বিজয়ের হাসি হাসলো প্রান্তিক। সৌরভ, রাফি, জুবায়ের, মালিহা, শাওন, দিলরুবা হো হো করে হেসে উঠলো। ফুচকার দোকানের অন্য লোকেরা খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছে সায়মার দিকে। 

দোকানদারও কাজের ফাঁকে মাথা তুলে বোঝার চেষ্টা করছে এখানে কি ঘটছে। সাদিয়া ও দিলরুবা অর্ধেক ফুচকা মুখে নিয়ে একজন অন্যজনের দিকে চোখ গোল করে তাকাচ্ছে। কি যেন খুব মজার কিছু ঘটে গেছে যা ওরা ধরতে পারেনি। 

সাদিয়া সায়মাকে চোখে ইশারা করে ’কি হয়েছে‘ জিজ্ঞাসা করলো। সায়মা কি করে জানবে কি হয়েছে। ও তো মাত্রই দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো।

“কনগ্র্যাচুলেশনস প্রান্তিক রয়!! তুই জিতেছিস। ঠিকই তুই সায়মাকে বস্তা থেকে বের করতে পারলি। কালকেই তুই তোর পিৎজা ট্রিট পাবি”। বললো রাফি।

প্রান্তিক উচ্ছাসের সাথে বললো,”আরে প্রথম স্টেপটা তো মালিহার ছিলো। সেদিন নেকাবটা না কাটলে কি আমি উইন করতাম… !? হা হা হা..”

ওদের কথাগুলো সব রহস্য ভেদ করে দিলো। 

সাদিয়ার মুখে দেয়া অর্ধেক ফুচকাটা যেন গলায় আটকে গেলো। সায়মার দিকে তাকিয়ে দেখলো, মেয়েটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লাল জামাটার উপর দু’এক ফোঁটার মতো অংশ একটু গাঢ় লাল। দেখে বুঝতে পারলো এ দু’এক ফোঁটা অশ্রু সায়মার গাল গড়িয়ে নেমেছে।

সাদিয়া ফুচকার টকটা প্রান্তিকের মুখের উপর ফেলে দেয়।ও রাগ হলে মুখে যা আসে তাই বলে দেয়। কি বলতে বলতে যেন সায়মাকে নিয়ে রুমে ফিরে এলো। সাদিয়া না আনলে বোধহয় অনন্তকাল ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। 

খাটে মাথা নিচু করে বসে আছে সায়মা। আর সাদিয়া কি কি যেন বলে যাচ্ছে। রাগ ঝাড়ছে নাকি কোনো উপদেশ দিচ্ছে সায়মা ধরতে পারছে না। মনে হলো কোনো গালি দিয়েছে সাদিয়া। কিন্তু এত দিনে কখনই তো সাদিয়ার মুখে গালি বা বাজে কথা শোনে নি। 

সায়মার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সব ঝাপসা দেখছে। চোখে পানি টলটল করছে। চোখের পলক ফেলে জমে থাকা অশ্রুগুলো ঝড়ে পড়তে দিতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। 

“কিরে !! তুই আবার বস্তায় ঢুকে গেলি!? কতো কষ্ট করে একটা বছর পরিশ্রম করে তোকে বস্তা থেকে বের করেছিলাম।

পরীক্ষার হলে ঢোকার সময়ই সায়মা ও সাদিয়ার সাথে প্রান্তিকের দেখা হয়ে গেলো।

“প্রান্তিক, শোন…” সাদিয়া কি যেন বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু সায়মা ওর হাত চেপে থামিয়ে খুব শান্ত ভাবে বললো, “অনেক বড় কোনো পাপ-চক্র শুরুর প্রথম স্টেপ কি, সেটা জানো প্রান্তিক?”

প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে চেহারায় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ফুটিয়ে তুললো।

সায়মা বললো,”প্রথম স্টেপ হচ্ছে, ‘আমি তো খুব বড় কিছু করছি না। এইটুকুই তো। একবারই তো। কি আর হবে। – এই ভাবনাটা।”

প্রান্তিক এমন ভাবে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে যেন … সায়মা যে ভাষায় কথা বলছে তা পৃথিবীতে এখনো আবিষ্কারই হয় নি। 

সায়মা আবার বলা শুরু করলো , ”হয়তো, আল্লাহ আমাকে এ ব্যাপারটাই শেখাতে চেয়েছেন। তাই তোমাকে দিয়ে এক বছর ট্রেইন করিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌!!”

[ কাল্পনিক ]

প্রত্যাবর্তন
নুসরাত জাহান মুন
(২৮ নভেম্বর ২০১৭)