বিয়ের অনুষ্ঠান 

সামান্থা সাবেরীন মাহী

প্রশ্নঃ কেন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে না, রাস্তা দিয়ে হাঁটো না? সেখানে ছেলেমানুষ থাকে না ! শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানেই তোমরা যাও না আর বল মিক্স পরিবেশে যাও না, এর কারন কি?

উত্তরঃ যদি সময় দেন তাহলে বলি আর মুক্তমন নিয়ে কথাগুলো শুনবেন ও বুঝার চেষ্টা করবেন ইনশা আল্লাহ্‌ । বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই না – এই কথা টা ঠিক না । যাই, তবে যে অনুষ্ঠানে নারী, পুরুষ দের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত থাকে সেখানে যাই । কারন হল, বিয়ের অনুষ্ঠান যেগুলো একসাথে আয়োজিত হয় সেখানে, মেয়েরা তাদের বেস্ট পসিবল মেক আপ এ আর মোস্ট এক্সপসিং গেট আপ এ উপস্থিত থাকে। সৌন্দর্য প্রদর্শনী চলে । আর রাস্তা দিয়ে হাঁটার কথা বলছেন! সেখানে কেউ বিয়ে বাড়ির সাজ পোশাকে বের হয় না । আমাকে অবশ্য আরেকজন হজ্জের কথাও বলেছিলেন! কোথায় হজ্জ আর কোথায় বিয়ের অনুষ্ঠান! হজ্জ এ কি পরিমান কষ্ট করতে হয়, যারা হজ্জ করেছেন তারা জানেন। আর এর জন্যই হজ্জকে নারীদের জন্য জিহাদ বলা হয়েছে।

যাই হোক মূল কথায় ফিরে আসি, ঐ সব অনুষ্ঠানে পুরুষরা সেইসব অতি সজ্জিত নারীদের সাথে কথাবার্তা, হাসিঠাট্টা , কুশল বিনিময় ইত্যাদি করে । তরুন প্রজন্মে দেখা যায় অমুক ছেলে তমুক ললনার প্রেমে পড়ে! আর সুসজ্জিত অবস্থায় স্টেজে “প্রদর্শনীর জন্য” সাজিয়ে রাখা হয় নববধূকে! আপনি হয়তো বলতে পারেন, ‘এটাই তো হয়ে আসছে বা এটা আমাদের কালচার।’ তাহলে এই ব্যাপারটাও একটু ব্যাখ্যা করছি ।

আমেরিকায় ৭০ এর দশকে হোমোসেক্সুয়াল দের মানসিক বিকার গ্রস্থ ধরা হতো । কালচারালি তাদের কোন মান, সম্মান তো দূরে থাক কোন প্রকার গ্রহণযোগ্যতাও ছিল না। তবে এখন সে কালচার বদলে গেছে। হোমোসেক্সুয়ালদের কেউ কটু কথা বললে এখন তা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে গন্য হয় ! ভারতীয় হিন্দু সমাজের কালচার ছিল ‘সতীদাহ’ । সেই কালচারও এখন আর নাই । এরকম হিসাব করলে বা বিশ্ব এর কৃষ্টি কালচারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটাও দেখা যাবে যে কোন দেশের কালচার অন্য কোন দেশের জন্য অনৈতিক আচরণ । আবার এখন নৈতিক বা অনৈতিক আচরণ কেও সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করা হয় কোন দেশের সামাজিক প্রথা কেমন বা লোকজন কি ঠিক মনে করে তার উপর। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কোন দেশের সামাজিক প্রথা নির্ধারিত হয় সমাজের প্রবৃত্তি, মানুষের প্রবৃত্তি এবং সেই সময়ে তাদের যেটা ঠিক মনে হয় তার উপর! এবং যা কি না পরিবর্তনশীল।

কিন্তু ইসলাম কখনও এরকম পরিবর্তনশীল ছিল না এবং পরিবর্তন করার সুযোগও নেই। অনেকে বলতে চান তাহলে কি প্রাচীন আরব সভ্যতায় ফিরে যেতে বলছ? – না , মোটেও না। ইসলামের পূর্বে আরব সমাজে অনেক খারাপ প্রথা ছিল। যা ইসলামের আগমনের পর বিলুপ্ত হয়েছে। ইসলাম সর্ব কালের সকল মানব সভ্যতার জন্য পারফেক্ট সমাধান দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে আর কিয়ামত পর্যন্ত যাবে। মূলকথা যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি জানেন এবং খুব ভাল করেই জানেন তার সৃষ্টি কেমন । আর নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশায় কি লাভ আর কি ক্ষতি তিনি আমাদের জানা যেকোনো কালচারের নৈতিকতার যুক্তি থেকেও বেশী জানেন ।

মোটকথা, ইসলামে নিষিদ্ধ এরকম কোন পরিবেশে কোন মুসলিমের যাওয়া নিষিদ্ধ। এই কারনেই যাই না । কারন যদি বলেন এটাই প্রধান তবে যুক্তি যদি চান তাও দেখাতে পারি । কোন জায়গায় মদ পরিবেশিত হচ্ছে আর সেখানে আমি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছি ! এটা আমার ইসলামিক নৈতিকতা বাঁধা দেয় । আর বিয়ে বাড়িতে শুধু যে অবাধ মেলামেশা হয় তা না সেইসাথে থাকে মিউজিক। আপনার বিবেক বা মস্তিষ্ক সেটা নিষিদ্ধ না বললেও ইসলামে তা নিষিদ্ধ। আর ঐ যে বললাম , যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি বেশী জানেন আপনার আর আমার জন্য কোনটা মঙ্গলময় । একটু বুদ্ধি খাটালেই বুঝবেন – ” ইসলাম বিশ্বাস করে প্রতিরোধ, প্রতিকার অপেক্ষা শ্রেয়।” আর এ কারনেই নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশায় বাঁধা দেয় । সবাই যদি তার সৃষ্টিকর্তার প্রজ্ঞা বোঝার চেষ্টা করতো তাহলে ‘পরকিয়া’ এর মত সামাজিক ব্যাধি থেকে, অশ্লীলতা থেকে সমাজকে রক্ষা করা যেত।

মিউজিক নিষিদ্ধ হবার ব্যাপারে আপনার বুকে ব্যাথা অনুভুত হলেও এখানেও আপনার সুচিন্তা কামনা করছি । একটু ঘেঁটে দেখেন যারা এই জগতের সাথে আছে তাদের জীবনে কি সুখ আছে?? তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মাদকাসক্তি, ব্যাভিচার, সমকামিতা! জীবনের গান গাওয়া, মানুষকে সুরের সাগরে ডুবিয়ে তাদের কেউ কেউ অনেক সফল হওয়া সত্ত্বেও আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয়! তাহলে শেখার কি আছে এইসব থেকে?? ডিপ্রেশন এর সময় দুঃখের গান শুনে হতাশা আরও বাড়ছে, আর আনন্দের সময় ঐ মিউজিক ই মানুষকে উন্মত্ত করছে, করছে বাঁধনছাড়া! কোনটার ফলাফলই কি মঙ্গলজনক?? প্রশ্নগুলো নিজেকে করাই শ্রেয়।

আর আজকাল বিয়ে কে কঠিন করা হচ্ছে আর ব্যাভিচার কে করা হয়েছে সহজ। কারন প্রেম করা , লিভ টু গেদার করা সহজ বিয়ে থেকে। বিয়ের অনুষ্ঠান অনাড়ম্বর করে করা হলে ছেলে বা মেয়ের স্ট্যাটাস কমে যাবে এই ভেবে অযাচিত ভাবে খরচ করা হচ্ছে । প্রচুর অর্থ, সম্পদ ও মানুষের সময় – যা কি না তার জীবন- এর যথেচ্ছা অপচয় হচ্ছে। শুধু এই সামাজিকতা রক্ষা বা সামাজিক অসুস্থ প্রথাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে !! কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি তা হল, যে বিয়েতে খরচ কম হয় সে বিয়েতে কল্যান বেশী। আমাদের সমাজ এখন লোকদেখানো জ্বরে আক্রান্ত । লোকদেখানো এখন একটা আসক্তিও বটে । ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করতে না পারলে যে হাত নিশপিশ করে – এসবই ঐ আসক্তির ফলাফল।

আর পরিশেষে বলতে চাই , আমার ও আপনার রব -আল্লাহ্‌র নির্ধারিত পথ ছাড়া কোন পথেই প্রকৃত সুখ বা শান্তি নেই । সবই শেষে মরীচিকার মত মিলিয়ে যাবে। এর জন্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার রবের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। এতেই আছে প্রকৃত সাফল্য ইনশা আল্লাহ্‌।

………………..

#রৌদ্রময়ী_ফ্রাইডেরিমাইন্ডা