সমাধান

ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে দেখলো বাজে সাড়ে আটটা। আবিদা আলার্মটা কোন সময় বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে, টেরও পায়নি। আজকে ক্লাস ধরতে পারবে কি না সন্দেহ। উত্তরা থেকে সেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি, এর উপর ক্লাস সাড়ে ১০টায়! তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে চলে গেলো। বাথরুম থেকে বের হয়েই চট করে তৈরি হয়ে নিয়ে টেবিলে রাখা নাস্তা কোনোমতে মুখে পুরে মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ির সামনের ৱাস্তায়। বাসা থেকে খুব দূরে না বাস স্ট্যান্ড। ভার্সিটির বাস মিস করেছে তাই টিকিট সার্ভিস বাসেই যেতে হবে। টিকিট কেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে তখনি একটা বোরখা পড়া ভিকারিনী তার প্যারালাইজড বাচ্চাটাকে একটা উইলচেয়ারে বসিয়ে আবিদার সামনে এসে দাঁড়ালো। 

– আসসালামুআলাইকুম আফা। কিমুন আসেন? 

-ওয়ালাইকুমআসসালাম। ভালো আছি। আপনি কেমন? 

– বালাই আসি। বার্সিটিতে যান? 

– হ্যা। আজকে একটু দেরি করে ফেলেছি।

ভিখারিণীটা আবিদার পরিচিত, প্রায় আলাপ হয়। কিন্তু োর যখন কথা বলে চারিদিকের লোকজন বারবার তাকায়। কেমন জানি একটা চাহনি। ভিখারিণীর সাথে কুশল বিনিময় হয়তো অবাক করে কিছু লোক কে। কিন্তু আবিদা নির্বিকার, ব্যাগ থেকে ১০ টাকার একটা নোট বের করে ভিখারিনীকে দেয়। সবসময় এ কাজটা করে, ভালো কাজ মনে করেই করে আবার পুণ্যের আশাতেও করে। যদিও বাহ্যিক ভাবে তেমন ধার্মিক নয় আবিদা। নামাজ পড়ব পড়ব করে পড়া হচ্ছেনা। ফজরটা মিস করলে বাকি গুলো পড়ার ড্রাইভ পায় না। তবে বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা বর্তমান, পর্দা করে চললে অনেক সেফ চলা যায়। বোরখা পড়া মেয়েদের সম্মান করে কিন্তু কেন যেন তাদের বেশ কট্টর মনে হয়। মনে হয় , বোরখা পড়ার কি দরকার! শালীনভাবে ওড়না গায়ে জড়ালেই তো হয়! অনেক দিন চিন্তা করেছে কুরআনের অর্থ পড়বে , পড়েছেও কিন্তু পুরোটা পড়ার ধৈর্য্য, সময় বা আগ্রহ কোনোটাই কখনো পায়নি। এ নিয়ে অবশ্য কিছুটা অপরাধবোধও কাজ করে। তবে এই বয়সী ছেলেমেয়েদের যেমনটা হয় আর কি,সব কিছুই খুবই হালকা হয়ে যায় একসময়। আবিদাও তার ব্যতিক্রম নয়। 

বাস চলে আসতেই আসে উঠে পড়লো আবিদা। ডানদিকের জানালার কাছের সিটটাতে গিয়ে বসলো। বাস ছাড়লো একটু পরেই। খিলক্ষেত পর্যন্ত জ্যাম ছাড়াই চলে এসেছে , ভাবাই যায় না। তবুও কিছুক্ষন পর পর হাত ঘড়িটা দেখছে। বনানীতে এসে কাকলীতে ১৫ মিনিট গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, জ্যাম। নিজের উপর খুব বিরক্ত লাগছে আবিদার- কেন যে ঘুম থেকে আগে উঠলোনা! জ্যাম ছেড়ে দিয়ে বনানী বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালে প্রচুর লোক উঠলো। আবিদার পাশের সিটে বসলেন একজন বয়ষ্ক ভদ্রলোক। সব সিট ভরে যাওয়ায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে। কিছুদূর না যেতেই পাশের ভদ্রলোক বললেন , 

-ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট তুমি? 

– জ্বী। 

– কোন ভার্সিটি? 

– ঢাকা ইউনিভার্সিটি। 

– ও মাশাল্লাহ। তাহলে তো গুড স্টুডেন্ট! 

– না আঙ্কেল , তেমন গুড না। 

– না না , ঐখানে কি আর খারাপ স্টুডেন্টরা পড়ে! 

আবিদা মুচকি হাসলো। মনে মনে খুশি হলো। ঢাকা ইউনিভার্সিটির এই আরেকটা সুবিধা, রেজাল্ট যাই হোক এই নামের দাপটেই ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের কী যেন মনে হয়। যাই হোক ভদ্র লোক আবার বললেন , 
– তোমরা কয় ভাইবোন? 

এবার আবিদা বিরক্তিবোধ করলো। অপরিচিত লোকের এত কথা জানার দরকার কী? কিন্তু বয়ষ্ক লোক বেয়াদবিও করতে পারছে না। 

– তিন বোন 

-ভাই নাই? 

আবিদার ইচ্ছা করলো বলতে আছে। লোকেরা মেয়ে মানুষকে তেমন পাত্তা দেয় না, ভাই আছে শুনলে হয়তো আর কথা বাড়াবেনা। কিন্তু মিথ্যা বলা পছন্দ করে না আবিদা। 

-না। 

-তোমার বাবা কি করেন? 

– রিটায়ার্ড গভর্নমেন্ট অফিসার। 

-ও আচ্ছা। তুমি কত নাম্বার? 

– মেঝো। 

– বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে? 

– জ্বী 

– ভালো , ভালো , খুব ভালো। আমার ৩ ছেলে। বড়টা আমেরিকাতে থাকে। মেঝোটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ে আর ছোটটা কলেজে। বড় ছেলে এই তো সামনের মাসে ঢাকা আসছে। ওর জন্য মেয়ে দেখছি। ভালো মেয়ে পেলে বুঝেছো মা, ছেলেটাকে বিয়ে দিয়ে দিব। 

আবিদা যার পর নাই বিরক্ত। একে তো সময় অনেক হয়ে যাচ্ছে তার উপর আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেলো। এখন যদি ঠিকানা চায়! না, ঠিকানা দেওয়া যাবে না। আরেকবার জিজ্ঞেস করুক, মুখের উপর বলতে হবে , বেয়াদবি হলে বেয়াদবি। কিন্তু সাহসের কি অবস্থা তা তো আবিদাই জানে। মনে মনে দুআ করছে লোকটা আর কিছু না বলুক। এতক্ষন পি.এম এর অফিস পার হয়ে কারওয়ান বাজারের জ্যামে আটকে ছিল, জ্যাম ছেড়েছে। বাংলামোটর পার করে পুরাতন শেরাটনের সামনে এসে আবার গাড়ি দাঁড়ালো। পাশের লোকটা কি যেন বলতে যাচ্ছে তখনি আবিদা বলল 

– আঙ্কেল আমি নামবো। আসসালামুআলাইকুম। 

– ও আচ্ছা। ওয়ালাইকুমআসসালাম। 

লোকটা উঠে গিয়ে জায়গা করে দিলো। আবিদা শেরাটনের সামনেই নেমে গেল। একে তো ক্লাসের দেরি এর মধ্যে আবার শাহবাগ পর্যন্ত হাঁটতে হবে! তার উপর আবার রিক্সাওয়ালা মামারা যেতে চায় না। যাই হোক কোনো মতে ক্লাসে পৌঁছালো। 

——————–

ক্লাস শেষে ক্লান্ত আবিদা বাড়ির দিকে ছুটে। ওর বান্ধবীরা ওকে নিয়ে হেসেই মরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও কোনো আড্ডায় থাকে না আবিদা। বাসা অনেক দূর আর সন্ধ্যা করেও বাড়ি ফিরতে চায় না। ইদানিং নিজের সেফটি নিয়েও ভয় পায়। ঐদিনের বাসের ওই লোকটা ভয়ঙ্কর ছিলোনা। তবে তারপরের দিন একটা লম্বা লোককে জানালার পাশটায় বসতে দিয়ে ও বাইরের সিটটায় বসেছিল। অতিরিক্ত লম্বা হওয়ায় পা রাখতে পারছিলোনা বেচারা। তাই আবিদা বলেছিলো, 

– ভাই আপনি এই সিটে আসতে পারেন , আমি নাহয় ঐ সিটে বসি। 

খুবই সহানুভূতির সাথেই বলেছিলো। লোকটিকেও ভদ্রলোক মনে হচ্ছিলো। বিনয়ের সাথেই মানা করে লোকটা। 

তবে বনানী পার হতে না হতেই ঐ লোকটা আবিদার কানের কাছে, খুব কাছে এসে বলল, 

– আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিবেন? 

আবিদা অতি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল। কষ্টে চোখে পানি চলে আসলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো কোনো সিট খালি আছে কি না। কিন্তু সব ভরা। চিৎকার করবে? না কি লোকটাকে চড় মারবে? কি করবে বুঝতে পারছেনা। ওর হাত পা অবশ অবশ লাগছে। ভাবতেই পারেনি আবিদা কাউকে দয়া প্রদর্শনে এরকম কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। এয়ারপোর্টে পৌঁছাতেই লোকটা আবারো নাম্বার চাইলো। আবিদা দাঁড়িয়ে গেলো। আবিদা পিছনে একটা মহিলার পাশে সিট খালি হওয়ায় ওখানে গিয়ে বসলো। লোকটা এয়ারপোর্টেই নেমে গেলো। ভয় পেয়েছিলো বোধ হয়। বাসায় এসে মা, বাবা, বোনদের ঘটনা বললো। আর অনেক কাঁদলো। ওর কান্না দেখে ওর বোনরা হেসেই খুন। এত আবেগপ্রবণ হলে চলে! ওর বাবা বললেন অনেক মেয়েরা হয়তো এমন আছে যে নাম্বার চাইলেই দিয়ে দেয় টাই আবিদার কাছেও চেয়েছে। এতে মন খারাপ না করে নেক্সট টাইম অ্যাকশন নিতে হবে। কিন্তু আবিদা মানতে পারছে না , কেন লোকজন কারো মানবিক আচরণে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে! 

সেই থেকে বাসে উঠে মেয়েদের পাশের সিট দেখে বসে। কিন্তু সবসময় মেয়েদের পাশে খালি পায় না বা ওর পাশে এসে কোনো লোক বসে পড়ে! আবিদা কারো সাথে কথা বলে না। নিজেকে বাঁচিয়ে চলে। কিন্তু পাত্রী সন্ধানী আঙ্কেলদের যন্ত্রনায় কানে হেডফোন গুঁজে থাকে। কথা না শোনার ভান করে। তবুও তারা ইশারা করে হেডফোন খুলতে বলে। অভদ্র হওয়া জানেই না আবিদা তাই খুব কষ্ট পায়। কাউকে পাবলিকলি অপমান করা বা গালমন্দ করা ওর স্বভাবেই নেই। এখন কি যে বিপদে পড়ছে! এমনও না যে ও বিশ্বসুন্দরী বা খুব উগ্র চলে। তবুও এমন উটকো ঝামেলা! 

———————————-

ইউনিভার্সিটিতেও কোনো ছেলে বন্ধু নেই আবিদার। প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলে না। কিন্তু হঠাৎ একদিন ফোন আসলো ওর মোবাইলে,

-হ্যালো। আসসালামুআলাইকুম। 

– ওয়ালাইকুমআসসালাম। আবিদা বলছো? 

– জ্বী। আপনি কে বলছেন? 

– তুমি আমাকে চিনবেনা তবে আমি তোমাকে চিনি। 

– ভাই আমি আমার পরিচিত ছাড়া কারো সাথে কথা বলি না। 

– ভালো। তবে আমি তো বললাম আমি তোমাকে চিনি। তোমার ভার্সিটিতেই পড়ি , তোমার সিনিয়র। তবে একই ডিপার্টমেন্ট না। 

– তাহলে ভাইয়া আপনি আমার মোবাইল নাম্বার কিভাবে পেলেন? বা কে দিলো? 

– হা হা হা ! সেটা তো বলা যাবে না। আসলে আমি খুব ডিপ্রেসড কয়েকদিন ধরে তাই আমার এক পরিচিত আমাকে বললো ,’একটা চমৎকার মেয়ের মোবাইল নাম্বার নিবেন?’ আর তোমার নাম্বারটা দিলো।

– তাহলেতো ভাইয়া এখন আপনাকে বলতেই হবে সেই ব্যক্তি কে। কারণ তাকে এটা আমার জানাতেই হবে যে আমি কোনো কল গার্ল না যে , যেকেউ কল করবে আর আমি মনোরঞ্জন করবো! 

কিছুক্ষন নীরবতা। এর পর ঐপাশ থেকে বললো 

– আবিদা মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। বিশ্বাস করতে শেখো। আমি তো তোমার বন্ধু হতে চাচ্ছিলাম মাত্র।

– আমার বন্ধুবান্ধবের কোন অভাব নাই। ধন্যবাদ। আর বড়দের শ্রদ্ধা করি বন্ধুত্ব করে অভ্যস্ত নই। 

– ওকে ঠিক আছে। ভালো থেকো। 

– জ্বী। আল্লাহ হাফেজ।

ফোনটা নামিয়ে নিয়ে নিজের পারফরমেন্সে নিজেই মুগ্ধ। অভদ্র হতে পারে না তো কি , ভদ্রভাবেই ট্যাকল করতে হবে। 

————————————————-

বাসে করে ভার্সিটি যাবার পথে এখন হেডফোন কানেই গুঁজে রাখে আবিদা। কথা না শোনার ভান করে। আজও তাই। বনানী পর্যন্ত আসার পর আবারো একগাদা লোক উঠলো। বসে ওঠা লোকগুলোর মধ্যে একজন কালো টি-শার্ট পড়া যুবক উঠলো। সে উঠার পর থেকেই ক্ষনে ক্ষনে আবিদার দিকে তাকাচ্ছে। বাসে দাঁড়িয়ে থাকে লোক ঠেলে আবিদা যে সারিতে বসা , তার পাশে এসে দাঁড়ালো। মাঝে একটা সিট খালিও হলো কিন্তু ওই লোক আরেকজনকে বসতে দিলো আর নিজে দাঁড়িয়ে থাকলো। আবিদা বুঝতে পারলো, ঐ লোক আবিদার পাশের লোকের উঠে যাবার অপেক্ষায় আছে। আবিদা মনে মনে নিজেকে তৈরী করে নিচ্ছে। that’s it আবিদা! তোমাকে এখন স্টেপ নিতে হবে। বসুক বেটা , তারপর যদি কথা বলে তখন কিছু একটা করতেই হবে। আবিদা যা ভেবেছিলো তাই হলো! শাহীন কলেজের সামনে ওর পাশের ভদ্রলোক উঠে পড়লেই সাথে সাথে ঐ সিটে বসে পড়লো যুবকটা। পরনে কালো টি-শার্ট , জিনসের প্যান্ট , ভদ্র চেহারা। বোঝার কোন উপায় নেই এরাও সুযোগসন্ধানী!

আবিদা গান শোনার ভান করছে। বাইরে তাকিয়ে চিন্তা করছে , ” বলুক একবার” 

যুবক হাত নেড়ে কিছু একটা বলতে চাইছে বোঝালো। আবিদা হেডফোন খুলে তাকালো। 

– ভার্সিটিতে পড়েন? 

– জ্বী 

-কোনটা? 

– ঢাকা ইউনিভার্সিটি 

-কোন ইয়ার ? 

-ফার্স্ট 

-কোন ডিপার্টমেন্ট? 

-sorry , I don’t like to give my information to strangers. 

বাঙালী বাংলা ভাষা নিয়ে যতই লাফালাফি করুক কিন্তু ইংরেজি শুনলেই পাংচার হয়ে যায়! আবিদার সামনের সারিতে বসে থাকা একজন আঙ্কেল গোছের ভদ্রলোক ওদের কথোপকথন শুনছিলেন। আদিবার হঠাৎ এই ভিনদেশি জবাবে খুব মজা পেয়েছেন মনে হলো। পিছনে তাকিয়ে সম্মতি সূচক হাসি দিলেন। আবিদা সাহস পেলো। এবার কিছু একটা উল্টা পাল্টা করলে বিশাল চিৎকার চেঁচামেচি করবে। at least ওই আঙ্কেল সাপোর্ট করবেন। বেচারা যুবক তার ভাঙা চোরা ইংরেজি দিয়ে কথোপকথন চালিয়ে যাবার চেষ্টা করলো। আবিদা ওর ইংরেজির তীর আবার ছুঁড়লো। এবার কেল্লা ফতেহ। কথা বন্ধ। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে আবিদা। 

গন্তব্যস্হলে পৌঁছালে আবিদা বাস থেকে নামবে তাই লোকটাকে সরতে বললো। কিন্তু লোকটা সরছেন! বাস ছেড়ে দিবে তও সরছেনা। আবিদকে বাধ্য হয়ে লোকটার হাঁটুর উপর দিয়ে আসতে হলো! বাস থেকে নেমে ভার্সিটির দিকে যাচ্ছে আর মনে মনে লোকটাকে অনেক গালমন্দ করল। কিন্তু এই সব অভিজ্ঞতার কোনো সমাধান করতে পারলোনা। কী করলে কেউ আর ওর সাথে যেচেপড়ে কথা বলতে আসবেনা! 

ইভটিজিং বলতে লোকে শুধু এক্সট্রিম লেভেলটাকেই ধরে কিন্তু একটা একা মেয়ে পেলে বয়ষ্ক, যুবক কেউ যে বাদ যায় না গায়েপড়ে কথা বলে বিরক্ত করে – এই ব্যাপারটা কেন জানি থেকে যায় আড়ালেই! এটার সমাধান কী? আবিদা ভাবে পর্দা করলে কি এমন হবে? নিশ্চয়ই পর্দা করা মেয়েদের কেউ এভাবে ডিসটার্ব করার সাহস পায়না। কিন্তু পর্দা করলে কী বলবে ওর বন্ধুবান্ধব , আত্মীয়স্বজন ? তাই পিছিয়ে যায়। 

——————————————–

একদিন আবিদা ওর মায়ের বোরখা পড়ে আয়নায় নিজেকে দেখে। কি পবিত্র লাগছে ওকে। সেদিন থেকেই কোরানের অর্থ পড়া শুরু করে। কোরআনেই জানলো , ” আল্লাহকে ও তার রাসূলকে মান্য করো”, রাসূলকে মান্য করতে গেলে তো তাঁর হাদিস জানতে হবে। সেটাও জোগাড় করে ফেললো। হাদিস পড়ে জানলো জীবজন্তু বা জীবিত কিছুর ছবি আঁকা যাবে না। ওর নিজের আঁকা একটা সেলফ পোট্রেট ঝুলানো ছিল পড়ার টেবিলের উপর। হাদিসের বইটা বন্ধ করেই ছবিটা নামিয়ে ভেঙে ফেললো কাঁচ, ছিঁড়ে ফেললো ছবিটা। আঁকার খাতায় আরো এরকম ছবি ছিল সব চিরে ফেললো। অদ্ভুত শান্তি পেলো, মনে হলো এই প্রথম আল্লাহর কোনো আদেশ এক বাক্যে পালন করলো। 

হুট করেই একদিন ফুলহাতা কামিজ-সেলোয়ার ওড়না আর মাথায় স্কার্ফ পড়ে ভার্সিটিতে যাবার জন্য বাসে উঠলো। অবাক হয়ে দেখলো মানুষের আচরণ! ওর পাশে বসার জন্য আগে কোনো লোককে এত চিন্তা করতে দেখে নাই। এক লোক বাসে উঠে ওর পাশের সিটে বসতে গিয়েও ওকে দেখে বসলো না। একজন মহিলাকে বসতে বললো। যেখানে আবিদা বাসে উঠলেই আতঙ্কিত থাকতো সেখানে আজকে খুব নিরাপদ অনুভব করলো। মনে মনে বলল ,”আলহামদুলিল্লাহ”

———————

ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করছে এখন আবিদা। পাঁচওয়াক্ত সালাত পড়ছে, ফজরেরটা সহ। ওর মনটা এখন আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য ব্যাকুল। আল্লাহের হুকুমের সমস্ত প্রজ্ঞা হয়ত বুঝে না তবে বিশ্বাস করে সবটাই মঙ্গলময়। আবিদা এখন জানে দূরে কোথাও ভ্রমণের সময় মাহরাম থাকা জরুরি। মাহরাম অর্থ বাবা, ভাই, আপন চাচা, আপন মামা, আপন দাদা, আপন নানা, স্বামী, আপন ছেলে, আপন বোনের ছেলে, আপন ভাইয়ের ছেলে প্রমুখ। ভার্সিটি তে যাওয়ার সময় তাই এখন ভার্সিটি বাসেই যায়। আর ভাবে যারা নারীদের অধিকার নিয়ে এতো সভা সেমিনার করে তারা মেয়েদের জন্য পৃথক বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা, ইউনিভার্সিটি, কলেজের ব্যবস্থা কেন করে না? 

আবিদা আরো জেনেছে ভদ্রভাবে কথা বলার সময়ও নিজের কণ্ঠস্বরকে সুমধুর করা যাবে না কারণ এতে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা সুযোগ নিতে পারে। মেয়েদেরই কেবল পর্দার কথা আল্লাহ বলেননি, তিনি আগে ছেলেদের চক্ষু অবনমিত করে চলার কথা বলেছেন। একবার নজর পরে যেতে পারে কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকানো হারাম করেছেন! আলহামদুলিল্লাহ। আবিদার মনে হলো শুধু পর্দার নিয়ম যদি সবাই মেনে চলতো তবেই সমাজের প্রেক্ষাপটের আমূল পরিবর্তন হয়ে যেত। পর্ণগ্রাফির প্রচার বন্ধ হয়ে যেত, ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ , ডাস্টবিনে শিশুর লাশ সবকিছুর সমাধান পাওয়া যেত। 

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবিদা বোরখা পড়া শুরু করলো, নিকাব সহ। ওর চেহারা খারাপ না ভালো, ও ভার্সিটিতে পড়ে নাকি প্রৌঢ়া- কিছুতেই মানুষকে বিচারের সুযোগ দিতে চায় না। সে উপলব্ধি করে এক মাত্র আল্লাহর অধীনতা মানলেই মানুষ বুঝবে যে সে কতটা স্বাধীন, কতটা মুক্ত, কতটা নিরাপদ ইনশা আল্লাহ। 

……………………………..

সমাধান

সামান্থা সাবেরিন মাহী
(১ মার্চ ২০১৮)