তাঁর জীবনে রামদান


রাত গভীর। ঘর থেকে পা বাড়ালেই মাসজিদ। কিয়ামুল্লাইলের জন্যে মাসজিদে এসেছেন। দুই রাকাত করে দীর্ঘ তিলওয়াতে ধীর স্থির উঠাবসায় সলাত আদায় করছেন তিনি। তাঁর একনিষ্ঠ সালাতের সৌন্দর্য অতুলনীয়!

বন্ধুসম অনুসারীগণ একে একে এসে দাঁড়িয়েছেন পেছনে। রুকুকারীগণ রবের তাসবীহ পাঠ করছে নিবিষ্টচিত্তে। এভাবে একদিন,দুইদিন, তিনদিন গেলো।তিনি আসেন একাকী সলাত পড়তে, সবাই এসে জড়ো হয় তাঁর পিছে। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। উম্মাতের জন্যে সহজ করতে চান তিনি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা যদি বাধ্যতামূলক করে দেন রামাদানের রাতের এই সলাহ! পরদিন তাই দেরি করেন তিনি বের হতে।

কিয়ামুল্লাইল আরো বাড়িয়ে দেন তিনি শেষ দশ রাতে। কোমড় বেঁধে ইবাদতে নামেন যেন। জাগিয়ে দেন পরিবারের সবাইকে। এতোটা দীর্ঘ করেন রাতের সলাহ যে সাহাবীরা সুহুর করার সময় পাবেন কিনা চিন্তায় পড়ে যান কখনো।

যার গুনাহ নেই সেই মানুষটি মাফ চান রবের কাছে কত শতবার। যাদেরকে দেখনওনি সেই ভবিষ্যৎ উম্মাহর জন্যে চোখের পানি ঝরান সিজদাহতে। তাঁর দুআর খাতায় নাম আছে আমার আপনারও; আমরা যারা অতি তুচ্ছ সেই মাটির তৈরি শ্রেষ্ঠ মানুষের তুলনায়।
শান্তি বর্ষিত হোক সর্বকালের সেরা কিয়ামকারীর উপর।


ইফতারের সময় হয়ে এসেছে। খেজুর খুঁজলেন তিনি। পেয়েও গেলেন তাজা খেজুর। সেই খেজুরে ইফতার শুরু করতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর, তাও না হলে পানি খেয়ে সাওম ভাঙেন।

মা আঈশার (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) ঘর, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যতম প্রিয় স্ত্রীর ঘর। খেজুর গাছের ছাউনি দেয়া ছোট্ট ঘরে হাত দিয়ে ছাদ ছোঁয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরামের জীবনকে অগ্রাহ্য করেছেন।

বাসায় যতক্ষণ থাকেন ঘরের কাজ করেন। কখনো বকরির দুধ দোয়ান, কখনো নিজের জামাটা সেলাই করে নেন অথবা জুতা মেরামত করেন। মুসলিম জাতির নেতার ইফতারে থাকে না হরেক পদের খাবার। দিনের পর দিন চুলা জ্বলে না ঘরে।

দুই কালো বস্তুই তাঁদের খাবার, খেজুর আর পানি! কখনো হঠাৎ রুটি, মাংস, দুধ বা মধু খাওয়ার সুযোগ হয়ে যায়। বায়নাক্কা নেই খাওয়া নিয়ে, ভালো লাগলে খান, না লাগলে সরিয়ে রাখেন। ইফতার সুহুরে খেজুর খাওয়াকে প্রাধান্য দেন তিনি।

সুহুরের আগে শরীরটাকে একটু বিশ্রাম দিতে ঘুমালেও শুধু চোখটা বন্ধ থাকে আর অন্তর থাকে সজাগ। দুনিয়া বিমুখ এই জীবনে আল্লাহর প্রতি অভিযোগ নেই এক বিন্দু, আছে কেবল অন্তরের প্রশান্তি। দানের হাত আরো খুলে যায় তাঁর রামাদানে। নিজের কাছে কিছু জমিয়ে না রেখে উদারভাবে বিলিয়ে দেন। গুনে গুনে দান করা তাঁর অপছন্দ।

আল্লাহর প্রশান্তি পরিবেষ্টিত করে রাখুক এই অতি সাধারণ জীবনযাপনকারী অসাধারণ মানুষটাকে।


কুরআন পড়ছিলেন তিনি। তার সাথে আছেন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)। এই পর্যন্ত যত আয়াত নাযীল হয়েছে সারা রমাদান জুড়ে তাই আবার আত্মস্থ করিয়ে দিবেন জিব্রিল। কখনো তিনি রাসূলের (সাঃ) কাছে আসেন নিজের রূপে, দিগন্ত বিস্তৃত আকাশে শতাধিক ডানায়; কখনো আসেন কোনো সাহাবীর রুপ ধরে, কখনো ঘন্টার মতো আওয়াজ হতে থাকে। ওহী আসার সময়টায় বেশ শারিরীক মানসিক ধকল যায় মহামানবের উপর।

রামাদান কুরআন নাযীলের মাস। এক রামাদানে দুইবার সম্পূর্ণ কুরআন পড়লেন ফেরেশতা জিব্রিলের সাথে। শ্রেষ্ঠ নবীর বুঝতে বাকি রইল না এটাই তাঁর শেষ রামাদান। আর কোনোদিন ওহী আসবেনা। আর কিছুদিন পর হয়তো এই পৃথিবীতে সাহাবীরা সুদর্শন সুযোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতাকে এসে বলবে না, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! ”

সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সেই মানুষটার প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার ইচ্ছায় যার মাধ্যমে আমরা পবিত্র কুরআনকে পেয়েছি।


তাঁর জীবনে রামাদান
উম্মে লিলি