টুকরো স্মৃতি

২০১৫ তে দুই মেয়ে সহ পবিত্র ওমরাহ পালন করি।
সময়ের সাথে সাথে বুঝতে পারলাম হজ্জ ফরজ হয়ে গিয়েছে। যদিও তখন আমি সাধারণ একজন মুসলমান ছিলাম, যে কিনা পারিবারিক ট্রাডিশন হিসেবে নামাজ পড়ে, ভালোবাসার জন্য নয়।

যাই হোক, তখনই হিসাব শুরু করলাম কত টাকা লাগবে, মেয়েরা কার কাছে থাকবে, ছুটি কতদিন নিব, নানা চিন্তা। একদিন হাজবেন্ডকে বললাম। তিনি বললেন, আরো ১/২বছর যাক। কিন্তু আমার মন ছুটে গিয়েছিল আবার মক্কা যাবার জন্য।

অফিসের কাজের চাপে ১ সপ্তাহ এ নিয়ে আর কথা নি আমাদের দু জনের। আমি চাইছিলাম ও নিজ থেকে এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠুক। বৃহস্পতিবার রাতে তাহাজ্জুদে আল্লাহর কাছে অনেক চাইলাম, ও যেন নিজ থেকে বলে।

পরদিন দুপুরবেলা ঘটলো অদ্ভুত ঘটনা। আমার স্বামী খাবার সময় পকেট থেকে কাগজ বের করে বলল, “এই যে দেখতো নানা প্যাকেজ। কোনটাতে গেলে ভালো হয়?”

আমি কাপছিলাম তখন, কথা বলতে পারছিলামনা। এত তাড়াতাড়ি দুয়া কবুল হবে, বুঝিনি।

এরপর শুরু হল মনের পরীক্ষা। এখন কিভাবে চলছি, হজ্জের পর নিজেকে কিভাবে দেখতো চাই? হুজুর আপার কাছে আরো বেশী পড়তে লাগলাম। বই পড়েছি আর পরিচিতদের কাছে পাগলের মত শুনতাম। মহান রব আমাকে মেহমান হবার হুকুম করেছেন। এ উত্তেজনা বলে বোঝাবার নয়।

জীবনের অনেক বড় পাওয়ার অপেক্ষা একদিন শেষ হল। এয়ারপোর্টে ঢুকতেই মা বাবা ২ মেয়ের জন্য মায়াটা কেমন ফিকে হয়ে গেল। সারা পথই ভাবলাম কাবা ঘর দেখে কি দোয়া করবো?

সৌদিতে বেশ কিছুদিন কাটাবার পর, অবশেষে এলো সেই কাংখিত দিন, মিনার তাবুতে থাকার দিন। সেখানে কোনার সিট নিয়েছিলাম। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছিল, কি সুন্দরভাবে এত লোকের সুব্যবস্থা করছে। ধনী গরীব সব এক কাতারে নামাজ, সব সাদার মিছিল বারবার শেষ দিনের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল।

খুব শখ ছিলো মুজদালিফার কংকরের উপর শান্তির ঘুম দিব। দল রাস্তার উপর থাকায় ওটা হয়নি। তারপরও শুকরিয়া তাঁর দরবারে।

পরদিন সকালে ও বলল আমরা প্রথমে তাবুতে বিশ্রাম নিয়ে, তারপর কংকর মারবো। ৩ বার চক্কর দিয়েও তাবু খুঁজে পাইনি। তখন মনে হলো আল্লাহ এর নিশ্চয় ইচ্ছা, আমরা আগে কংকর নিক্ষেপ করি। সুতরাং আল্লাহর ইচ্ছাই পূরণ হোক। কংকর মারা অনেক সহজ হয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এরপর মক্কায় আসলাম তাওয়াফ সায়ী করতে। তাওয়াফের শুরুতেই ২ হাত প্রচুর ব্যাথা শুরু হল। ভয় পেলাম কিভাবে তাওয়াফ করবো? নীরবে আবারো তাঁর কাছে চাইলাম। আমি আবারো নতজানু হয়ে পরলাম । ঘটনাটা অলৌকিক মনে হল। সব কাজই আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালোভাবই শেষ হল।

যখনই বলা হল বিদায়ী তাওয়াফটা আজ হবে মনটা হাহাকার করে উঠলো। বারবার কান্নাকাটি করলাম। ভিক্ষা চাইলাম তাঁর কাছে, আমাকে আমার পরিবারসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে যেন তিনি পবিত্র হজ্জ করার তওফিক দান করেন।

আমাদের অনেকেরই হজ্জ করার মত অর্থ, সামর্থ আছে নেই ঈমানের দৃঢ়তা। আমরা অনেক দেশ ঘুরি, কিন্তু বুঝিনা হজ্জের গুরুত্ব। কোরআন পড়ি অর্থ বুঝিনা পুরস্কার শাস্তি আমলে আনিনা।

আমরা ভুলে যাই অনু পরিমান কাজের হিসাব পেতে হবে। তাই লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত সেই মহাসম্মেলনে নিজেকে সামিল করে অত্যাবশকীয় ফরজ আদায় করি। আর নিজেকে সমর্পণ করি দীনের পথে।

আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়াতের পথে রাখুন। আমিন।

টুকরো স্মৃতি
সাবেরা সুলতানা

জুলাই ২০, ২০১৯ইং