বাচ্চা নিয়ে ইবাদত

আমার গতবছরের রমাদানের সময় খুবাইবের বয়স ছিল ১বছরের কিছু বেশী। ঐসময়টায় খুব টেনশনে ছিলাম কিভাবে রমাদান কাটবে। ও তখনও হাটতে পারেনা ভালো মত।

তার উপর সারাক্ষণ তার সাথে কাউকে না কাউকে থাকতে হতো। নয়তো চিৎকার কান্না শুরু হয়ে যেতো। এমনকি পাশে খেলনা দিয়েও অন্যকিছু করা যেতো না। বই বা কুরআন হাতে নিলেই তার চিৎকার, কেড়ে নেয়া। সবমিলিয়ে রমাদানের আগে খুবই হতাশ ছিলাম। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ। যতটা টেনশনে ছিলাম ততটা কঠিন হয়নি। আল্লাহ খুব সুন্দরভাবে রমাদানে ইবাদাহ করার সুযোগ দিয়েছিলেন।

সেই রমাদানের কিছু টিপস এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাচ্ছি। যেন বাচ্চার মায়েরা উপকৃত হতে পারেন।

১. রমাদানের আগেই একটা প্ল্যান করে ফেলছিলাম। একটু বেশী করেই পয়েন্ট লিখেছিলাম যেন লক্ষ্য বেশী থাকলেও মিনিমাম ফুলফিল করতে পারি। ডায়রীতে বিস্তারিত লিখে, রুটিন বানিয়ে নিয়েছিলাম।

২. রমাদান কুরআনের মাস। তাই পুরো প্ল্যানটাই করেছিলাম কুরআন কেন্দ্রীক। কুরআন খতম, ৩০পারার সূরাহ রিভিশন (আগের রমাদানে মুখস্থ করেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ) , নতুন সূরাহ মুখস্থ, অর্থ, তাফসীর পড়া, কুরআনের দুআ গুলো বেশী বেশী রিপিট করা এগুলোই ছিল স্টাডি রিলেটেড প্ল্যান।

৩. যিকির, সাদাকাহ, নফল সালাহ, জবান সংযত রাখা, বেহুদা কাজে সময় কম দেয়া, বাহিরে কম যাওয়া (না পারতে), ঝগড়া রাগারাগি না করা কারো সাথে (এমনকি বাবুর সাথেও) এসব প্ল্যান নিয়েছিলাম বেশী।

৪. বাবুকে কেন্দ্র করে কিছু প্ল্যান করেছিলাম। যেমন: যিকির, সূরাহ মুখস্থ ওকে শুনিয়ে বলা।
ওকে সাথে নিয়ে যে ইবাদাহ করা যায় সেগুলো আলাদা লিস্ট করা।

এগুলো তো গেলো প্ল্যান করা নিয়ে। এবার বলি কতটুকু কি করতে পেরেছিলাম কিভাবে করেছিলাম।

১. সেহরীর সময় বাবু ঘুমে ছিল বেশীরভাগ দিন। তাই সেই সময়টায় তাহাজ্জুদ, খাবার রেডী করতে আম্মুকে হেল্প, কুরআন পড়তাম। যেদিন বাবু উঠে যেত সেদিন সেহরীতে কোনোরকম খাওয়া এবং তাকে সামলানোই ছিল মূল কাজ। এরপর ফজর পড়ে তাকে কিছু খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে কুরআন পড়তাম। সে না উঠলেও ফজরের পর কিছু সময় কুরআন পড়তাম।

২. বাবু সাধারনত ৯/১০ টা পর্যন্ত ঘুমাতো তাই ফজরের পর অনেকটা সময় পেতাম কুরআন পড়ে ঘুমানোর। নয়তো সারাদিনে আর সময় পাওয়া টাফ ছিল। এরপর আবার দুপুরে বাবু ১/২ঘন্টা ঘুমাতো আমিও সেসময়টা ঘুমাতাম নয়তো অর্থ তাফসীর, পড়তাম। বিকেলে ইফতার রেডী করার পর বাবুকে কেউ রাখলে সুযোগ পেলে কুরআন পড়তাম।

৩. ইফতারের পর মোটামুটি সবাই রেস্ট নিতো আর আমি সেসময় বাবুকে কারো কাছে দিয়ে বেশীরভাগ সময় আম্মুর কাছে দিয়ে কুরআন পড়তাম। রেস্ট বলতে শুধু শুধু শুয়ে বসে সময় নষ্ট করার চেয়ে ইবাদাহর মাধ্যমেও রেস্ট হয়, মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। এশার আযান দিলে বাবুকে রাতের খাবার খাইয়ে ৯টার দিকে ঘুম পাড়ানোর যুদ্ধ শুরু করতাম। খুবাইবের এলার্জির সমস্যার জন্য সহজে ঘুমাতোনা। খুব ইচিং হয়। সেজন্য ওকে ঘুম পাড়ানোর পর আমিও ভীষন ক্লান্ত হয়ে ওর সাথে শুয়ে পড়তাম। একটু রেস্ট নিয়ে উঠে এরপর তারাবীহ পড়তাম। এরমধ্যে তারাবীহতে আমি মুখস্থ করা সূরাহগুলো রিভিশন দিতাম।

৪. যে সূরাহ মেমোরাইজ করতাম তার ২/৩ আয়াত, বড় হলে ১আয়াত সকালে কয়েকবার পড়ে মুখস্থ করতাম, দিনে মোবাইলে সেই আয়াত অডিও শুনতাম, বা ইফতারের পর মুখস্থ করতাম আর অডিও শুনতাম। বাকি সময় বাবুকে খাওয়ানোর সময়, ঘুম পাড়ানোর সময় বার বার রিপিট করে মেমোরাইজ করতাম।

**বাচ্চারা সব কথা বুঝেনা। ওরা শুধু মনোযোগ চায়। তাই বাচ্চাকে খাওয়াতে, ঘুম পাড়াতে, খেলতে খেলতে সূরাহ, দুআ, একটু হাত, মাথা নাড়িয়ে, ঢং করে বললে ওরাও শোনে, নিজেরও পড়া হয়ে যায়। আবার ওদের ব্রেনেও ইনপুট হয়ে যায়। কয়েকমাস পর যখন তারা কথা শেখে তখন সেগুলো আউটপুটও দিবে ইন শা আল্লাহ।

এই ছিল মোটামুটি আমার রুটিন। আলহামদুলিল্লাহ রমাদান শেষে আউটপুট তো কেবল আল্লাহই জানেন। তবে যতটুকু করতে পেরেছিলাম তারজন্য আলহামদুলিল্লাহ।

মূলত পুরো রমাদানে সারাটা সময় যখনি সুযোগ পেয়েছিলাম সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম। আর মনকে বলেছিলাম রমাদানের পর বেশী ঘুমাবো এখন তাই একটু কম ঘুমাই।

আমার গতবারের রমাদানের অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র এজন্য শেয়ার করলাম যেনো কেউ উপকৃত হোক বা না হোক আমার জন্য দুআ করেন এবারের রমাদানকে যেনো কাজে লাগাতে পারি। রমাদানের মূল্যবান নিয়ামত, রহমাহ, বারাকাহ, মাগফিরাত যেনো পেতে পারি সেই দুআর আর্জি।

সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী।


বাচ্চা নিয়ে রামাদান
খালেদা সুলতানা সুইটি

(০৯/০৫/১৯)