রামাদান শেষ, তারপরেও…

এই রমাদান আমি যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়তো পার করতে পারিনি। অনেক আমল করতে পারিনি, অনেক দুয়া করতে ভুলে গেছি। কিন্তু তবুও রমাদানের একটা প্রভাব আমার জীবনে পড়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

একটা জিনিস আমি আবারও খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আমার জন্য কবরের জীবন অপেক্ষা করছে। দুনিয়ার জীবনকে ভালো করতে আমি যতটা চেষ্টা করি, কবরের জীবনকে সুন্দর করতে তার অর্ধেকও কাজ করি না। নিশ্চয়ই কবরের জীবন সত্য, কিন্তু আমরা তা ভুলে বসে আছি।

আমি মৃত্যুর কথা প্রায়ই ভাবি। মনে আছে ছোটবেলায় বিশ্বাস করতাম মৃত্যুর পর পুনর্জীবন আছে। সেই জীবনে যদি আমি কোন পোকা হই বা পশু হই – ইত্যাদি উল্টাপাল্টা ভেবে অনেক রাত ঘুমাতে পারতাম না। এখন ভাবলে হাসি পায় কিন্তু সে সময়ে ভয়টা খুবই সত্য মনে হতো।

সন্তান জন্মের পর থেকে প্রায়ই মনে হয় আমি এখন মরে গেলে আমার বাচ্চাদের কী হবে? কে ওদের আমার মত দেখে রাখবে, কে ওদের ভালো মুসলিম হওয়ার শিক্ষা দিবে? কত কী ভাবতাম। বাবুদের আব্বুকে প্রায়ই বলি আমি মরে গেলে তুমি ওদের অমুক মাদ্রাসায় দেবে, অমুক তমুক জিনিসের দিকে খেয়াল রাখবে ইত্যাদি।

কারও জন্য দুনিয়া থেমে থাকে না। আমি না থাকলেও আমার বাচ্চারা বড় হবে। হয়তো ওরা আল্লাহর হেদায়েতের মধ্যে থাকবে, নয়তো বিপথে যাবে। তারা আমার জন্য হয় সাদাকা যারিয়া অথবা সাদাকা আযাব হবে।

কবরের জীবনে আমি যতটুকু দুনিয়াতে করে এসেছি এবং যতটুকু করার নিয়ত ছিল ঠিক ততটুকুই নিয়ে যাব। সাদকা যারিয়া রেখে গেলে তা থেকে সওয়াব পাব। কিন্তু আমার পরে কে কী করলো নিজের ইচ্ছায়, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না।

কি অদ্ভুত তাই না?? আমি আর আমার আমল শুধু থাকবো।

সারাবছর বিভিন্ন আমল করতে আমাদের কত অযুহাত, বাচ্চার জন্য পারিনা, মাথা ব্যথা, সংসারে অশান্তি, ঘরের কাজ করে সময় নাই ইত্যাদি কত শত কাজের ভিরে আমল করার সময় হারিয়ে যায়।

সেই আমিই যদি রমাদানে রোজ ২টা হলেও আমল বেশি করতে পেরেছি তার মানে সারাবছরও এভাবে সময় বের করতে পারবো ইন শা আল্লাহ। আয়োজন করে বসে আমল নয়; কাজের ফাকে জিকির করা, অন্যের জন্য দুয়া করা, মিথ্যা, গীবত এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে যদি রমাদানে সচেতন হতে পারি; সারা বছর কেন নয়??

জানি বলবেন শয়তান ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা হচ্ছি শ্রেষ্ঠ জীব, শয়তানের মত নিকৃষ্ট নই। সেই শয়তান কিভাবে পারে আমাদের উপর এতো প্রভাব ফেলতে? শয়তানের থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। ভুলিয়ে দিলে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখেন মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। তবুও শয়তানের কাছে হার মানবেন না।

রমাদান আমাদের অনেকেই হয়তো সামনের বছর আর পাবো না। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া জীবন যতদিন আছে, সময় যতদিন আছে, আল্লাহর মত দয়ালু সৃষ্টিকর্তা যখন আছে, তখন গুনাহ মাফের জন্য শুধু রমাদানের অপেক্ষা কেন? আল্লাহ চাইলে আমাদের এমনিতেও ক্ষমা করে দিতে পারেন।

কে কবে মারা যাবো আমরা জানি না। আসুন আমাদের পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিই। সে জীবন তো সত্য। যেমনটা আমাদের এই জীবন সত্য। যিনি আমাকে এই জীবন দিতে পেরেছেন তাঁর পক্ষে মৃত্যুর পরেও জীবন দেওয়া সম্ভব।

রমাদান চলে গিয়েছে, কিন্তু আমাদের আমল করার ইচ্ছা, গুনাহ মাফের ইচ্ছা যেন চলে না যায়।

রামাদান শেষ, তারপরেও…
নাইলাহ আমাতুল্লাহ

জুন ০৮, ২০১৯ইং