চক্ষু শীতলকারী

আমাদের আড়াই আর দেড় বছরের বাচ্চারা দুজনেই নামাজ পড়ার বিষয়টা শিখে গেছে (আল্লাহুম্মা বারিক লাহুমা)। ওরা হাত বাঁধে, রুকূ করে, সিজদাহ দেয়। ওদের জন্য ছোটো ছোটো জায়নামাজ এনে দিয়েছে ওদের নানু, ওগুলা বিছায়। দুয়া করতে বললে দুই হাত তুলে দুয়া করে। এখন দেখি ওরা ওযু করার কথাও জানে! ওযুর ব্যাপারটা জেনে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি। কারণ আমি ওদেরকে ওযু করতে শিখাই নি।

বাচ্চারা বাবা-মায়ের কথা থেকে যতটুকু না শেখে তারচেয়ে অনেক বেশি শেখে বাবা-মা কে দেখে। বাবা-মা হিসেবে আমরা যদি ভালোভাবে ইসলাম পালন না করি, আমরা যদি দ্বীনের পতাকাবাহী না হই, আমরা যদি নিজেদেরকে নিয়ে, নিজেদের ঈমান, আদব, স্বভাব, ইলম, আমল নিয়ে সন্তুষ্ট হতে না পারি, তাহলে আমাদের বাচ্চাদেরকে নিয়ে আমরা কী আশা করছি? আমাদের বাচ্চারা খুব বড় ঈমানদার, আমলদার, মহামানব হয়ে যাবে?

বাচ্চাদের মধ্যে বাবামায়ের ছাপ পড়ে অনেক বেশি। আপনি নিজের সন্তানকে যেমন দেখতে চান, নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলুন। ইনশাআল্লাহ আপনার সন্তানরাও সেভাবেই গড়ে উঠবে। যে বাবা মসজিদে জামাতের সাথে সালাহ আদায় করে, যে মা উত্তম উপায়ে হিজাব পালন করে, তাদের বাচ্চাদেরকে এগুলো শেখাতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। ব্যতিক্রম আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটাই দেখা যায়।

বাবা-মায়ের আমলের প্রভাবে সন্তানরাও উত্তম গুণাবলি লাভ করে। আর যেসব বাবা-মা নিজেরাই ইসলামের ব্যাপারে আগ্রহী না, তাদের সন্তানদেরকে ট্রাক্টর দিয়ে ঠেলেও নামাজের দিকে ফেরানো যায় না।

সমস্ত রহমত ও বরকত দানের মালিক কে? একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। আপনি আল্লাহকে খুশি করতে গিয়ে নিজেকে বদলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আল্লাহ কি এটা জানেনা আপনি কী চান? আল্লাহ খালি বলে, “হও” আর সেটা মুহূর্তেই হয়ে যায়। আপনার জন্য যেটা অনেক কঠিন কষ্টসাধ্য সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, আল্লাহর কাছে সেটা কিছুই না।

আপনার সন্তানকে উত্তম মুসলিম হিসেবে তৈরি করা আপনার জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আপনি যদি আল্লাহকে খুশি করতে তৎপর হন, ইনশাআল্লাহ হয়ত এর বিনিময় হিসেবে আল্লাহ আপনা থেকেই আপনার সন্তানদেরকে আপনার জন্য চক্ষুশীতলকারী বানিয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে এটা খুবই সহজ কাজ…

চক্ষু শীতলকারী
-আনিকা তুবা
(০৫/০৩/২০১৯)