উদহিয়া

★দৃশ্যপট -১ (ঈদের আগে)

-বড় দেখে গরু কিনতে হবে কিন্তু, এলাকায় আমাদের পরিবারের একটা সম্মান আছে না?

-বেয়াই বাড়িকে গরুর রান (ক্ষেত্র বিশেষে পুরো গরু) পাঠাতে হবে।

-এ বছর ঋণ না করে উপায় নেই, মেয়ের শশুর বাড়িতে গরু না দিলে, মেয়ের সম্মান থাকবে না।

-ভাই, গরুর দাম কত হলো? আমারটার দাম কিন্তু ‘এত’!

★দৃশ্যপট -২ (ঈদের দিন)

ঈদের দিন গোস্ত ভাগ করার সময় ঘটে আরেক তেলেসমাতি কারবার।

-যে আত্মীয় গরুর রান পাঠায়, বিনিময়ে তাকেও একটি রান পাঠানো হয়।

-যে এক পোটলা গোস্ত পাঠায়, তাকে সেই একই আকৃতির অথবা তার চেয়ে আরো একটু বড় আকৃতির পোটলা পাঠানো হয়।

-ঘরের বুয়া, ড্রাইভার ইত্যাদি শ্রেণীর মানুষের জন্য এক/দেড় কেজির প্যাকেট করা হয়।

-গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ফকিরদের জন্য সব রকম গোস্তের টুকরা মিশিয়ে ছোট ছোট প্যাকেটে ভরা হয়।

অতঃপর ——-

ঈদের দিন বিকেল বেলা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দোকান বসে। মাত্র তিরিশ/চল্লিশ টাকা কেজিতে গরু, ছাগলের গোস্ত বিক্রি হয়!!

দরিদ্ররা সারাদিনে যত সংগ্রহ করতে পারে, স্বাভাবিকভাবেই তাদের ফ্রিজ নেই বলে, সেসব সংরক্ষণ করতে পারে না।

নিরুপায় হয়ে, নাম মাত্র মূল্যে এসব বিক্রি করে দেয়।

শহরের হোটেল ব্যাবসায়ীরা অতি কম দামে কোরবানীর তরতাজা গোস্ত কিনে ডিপ ফ্রিজে ভরে রেখে দেয় ও পরবর্তী অনেক দিন ধরে ব্যাবসায় ব্যাবহার করে।

কিন্তু ———

খোদ ঈদের দিনেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এর সত্যিকারের গরিবদের রান্নাঘরে উনুন জ্বলে না। জ্বললেও তাতে থাকে না গোস্তের কোন পদ।

★*******★*****★*******★*****★********★

এভাবেই একেকটি ঈদ কেটে যায়-

সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর ও লোক দেখানোর প্রতিযোগিতায়…

বেয়াই বাড়িতে সম্মান রাখতে ঋণের বোঝায়…

কোন মতে দায়মুক্তি জন্য, যেন তেন ভাবে গরীবদের ভাগ বণ্টন করে….

★*******★*****★*******★*****★********★

এখানে কুরবানির মূল লক্ষ্য অর্থাৎ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে খুশি করার বিষয়টা ঠিক কোন জায়গাটায় থাকে?

ঈদুল আদহা কি শুধু গলা পর্যন্ত খাওয়ার উৎসব? নানা পদের রান্নার উৎসব? প্রতিযোগিতার মচ্ছব?

আমরা কি পারি না, সমাজের এসব ঘুনে ধরা নিয়মের পরিবর্তন করতে? গোস্ত বন্টনের সময় প্রতিবেশীদের মাঝে তাকে খুঁজে বের করতে, যে কিনা কুরবানি দেবার সামর্থ্য রাখে না, আবার হাত পেতে চাইতেও পারে না!

অথবা যারা একাধিক পশু বা ভাগ কুরবানী দেন, তারা কি কয়েক ভাগ গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে দিতে পারেন না?

চাইলেই কিন্তু করা যায় অনেক কিছু!!

আমার পরিবারের অনেক সদস্যই কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সরোবর নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, দেশের দূরবর্তী এলাকার অতি দরিদ্র মানুষের মাঝে কুরবানী দিচ্ছেন৷

লেখার নিচে প্রতিষ্ঠানটির লিংক দিচ্ছি। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে না পারলে, সাহায্য নিতে পারেন সরোবরের।

ভেবে দেখুন তো, সারা বছর যারা এক টুকরো গোস্ত খেতে পায় না, তারা আপনার কুরবানির গোস্ত পেয়ে কত খুশি হবে?

আমাদের সবার যেন কুরবানির ত্যাগের মাহাত্ম্য অনুধাবন করার তৌফিক হয়।

উদহিয়া
হাসনীন চৌধুরী

অগাস্ট ০১, ২০১৯ইং