সাত বছরের মৃদুলা বাইরে থেকে আসার পর থেকে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। সুমনা বার বার মেয়েকে জিজ্ঞেস করছে, কি হয়েছে?
মেয়ে শুধু বলছে, “আম্মু, ভয় লাগে”। বোঝা গেল সে কিছু একটা দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে! কিন্তু কি দেখে ভয় পেয়েছে, সেটি কিভাবে প্রকাশ করবে, তা তার ছোট মস্তিষ্কে কুলোচ্ছিল না।
অনেক্ষণ পর জঘণ্য কাহিনীটি উদ্ঘাটিত হল!
সেদিন বিকেলে সুমনা তার মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল, সেখানে আরো অনেকে এসেছিল যার যার বাচ্চাদের নিয়ে। ছেলেমেয়েরা হই চই করে সবাইকে বিরক্ত করছিল দেখে, বাবা মারা তাদের ট্যাব, টাচ ফোন ইত্যাদি দিয়ে এক কোনায় বসিয়ে দেয়।
ব্যাস… ছেলে মেয়েরা ডুবে যায় মজার মজার ভিডিওর মাঝে………
ভিডিও দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে এক শিশু ইউটিউবের ‘বাজে’ একটি ভিডিওর লিঙ্কে প্রেস করে ফেলে… এবং সেই বাচ্চার পাশে বসে থাকায়, মৃদুলারও চোখ পড়ে যায় ‘নিষিদ্ধ’ ভিডিওটি।
পরিনামে বেচারি এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে, তাকে মানসিক ভাবে সামলে নিতে বেশ বেগ পেতে হয় সুমনা ও তার স্বামী কে!!
…………………………………………………………………..
আজকাল মায়েরা দেখি গর্ব করে বলে, “জানেন, আমার তিন বছরের ছেলেটা এত স্মার্ট! সে নিজে নিজে ফোন থেকে গেম ডাউনলোড করে খেলতে পারে!”
“আরে আমার বাচ্চা তো আরো স্মার্ট, সে তো যেকোন পাসওয়ার্ড নিজে নিজে খুলে ফেলতে পারে!
“আরে আপা, আমার মেয়ে তো এখনো স্কুলেই যায় নি, কিন্তু এসব ট্যাব, ফোন আমাদের চেয়ে ভালো বুঝে”।
এভাবেই সন্তান গর্বে গর্বিত হতে থাকে মা বাবা রা…
ছেলে মেয়েদের সামলাতে না পারলেই, তাদের হাতে একটা টাচ ফোন ধরিয়ে দেয়…। আর নিমিষেই কি এক অদ্ভুত জাদুর ছোঁয়ায় তারা ঠান্ডা হয়ে যায়…!
বাচ্চাদের খাবার সময়ে……
ঘুমানোর সময়ে………
খেলার সময়ে………
সকল সময়ে ইন্টারনেটের ওয়ালা এই ডিভাইস গুলোই এখন সবার পছন্দ!
অনেকে বলে এতে শিশুদের বুদ্ধি বৃত্তি বাধাগ্রস্থ হয়, খেলা ধুলা ব্যহত হয়…
কিন্তু আমি এসব বলবো না! আমি বলবো এর ফলে শিশুটিকে মানসিক ভাবে ‘মেরে’ ফেলা হয়।
হ্যাঁ, আমি আবারো বলছি , সন্তানদের মানসিক ভাবে ‘মেরে’ ফেলার জন্য, তার হাতে নেট একসেস আছে এমন ট্যাব বা ফোন তুলে দেবার আসলেই বিকল্প নেই!!
আপনি কি সারাক্ষন নজর রাখতে পারবেন আপনার ছেলে বা মেয়ে কি দেখছে? যারা ইউটিউব ব্যবহার করেন তারা সবাই জানেন, কত ভয়ঙ্কর বাজে ভিডিওর সাজেশন আসে সেখানে!
আপনি হয়তো জানেনও না, আপনার আদরের সন্তান আপনার দেয়া উপহার দিয়েই ধীরে ধীরে নিষিদ্ধ এক জগতে প্রবেশ করছে!
প্রথম হয়তো এসব ভিডিও দেখবে কৌতুহল মেটাতে………
অতঃপর দেখবে তার ছোট মনের বিকৃত ক্ষুধা মেটাতে!
একবার যখন সে এই নিষিদ্ধ আনন্দে মজা পেয়ে যাবে…………… তখন আপনি কি পারবেন, আপনার শিশুকে তার নির্মল শৈশব ফিরিয়ে দিতে? পারবেন তার মন থেকে সব কিছু মুছে ফেলতে?
যখন সে আসে পাশের সকলকে নিয়ে উদ্ভট নোংরা ফ্যান্টাসিতে বিভোর হয়ে যাবে, আপনি কি পারবেন নিজের সন্তানের এই কদর্য রূপ সহ্য করতে?
এই ছেলে মেয়েগুলো যখন বড় হয়ে নষ্ট কুলাঙ্গারে পরিণত হবে, তখন এই মা বাবারাই কিন্তু দায়ী থাকবেন! কারন এরাই তো সর্ব প্রথম নোংরা পৃথিবীর দরজাটি খুলে দিয়েছিলেন, তাদের আদরের কোমলমতি সন্তানের জন্য…………
জরিপে দেখা গেছে, পর্ণ ভিডিওতে আসক্ত বাংলাদেশের ৭৭% শিশু-কিশোর! !!!
বাবা মা’রা যে হারে, ছেলে মেয়েদের স্মার্ট ফোন দিয়ে স্মার্ট বানানোর চেষ্টা করছে, অতি সম্প্রতিই হয়তো এই হার ৯০% এর উপরে উঠে যাবে!
বি দ্রঃ যখন আপনার সন্তান স্পর্শ ফোনের রঙিন দুনিয়া মুহুরতেই বুঝে ফেলে, আপনার চেয়ে বেশি পারদর্শী হয়ে যায় এগুলো অপারেট করতে, তখন তাদের স্মার্টনেসে আনন্দিত হয়ে কোন লাভ নেই।
নতুন প্রজন্মকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য। তাদের মেধা অনেক ব্যাপারেই আমাদের চেয়ে তুখোড় হবে, এটাই স্বাভাবিক!
দয়া করে ভুলে যাবেন না, আল্লাহ্ আপনাকে এই সন্তান দিয়েছেন ‘আমানত’ স্বরুপ, তাকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক দিকে পরিচালিত করা আপনারই দায়িত্ব!
“পর্ণ ও আমাদের শিশুরা!”
হাসনীন চৌধুরী
জুন ১৭, ২০১৯ইং